বাংলাদেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটি।
Published : 30 Apr 2024, 04:30 PM
দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মঙ্গলবার।
চুয়াডাঙ্গায় এদিন থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে। আর ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে।
এর আগে ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল বগুড়ায়। আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
চলতি মৌসুমে টানা ৩১ দিন ধরে চলা দাবদাহ আরো দুয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে বলে আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।
সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ঢাকায় ছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ঢাকায় তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে বেড়েছে।
চলতি মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এরকম অবস্থা আরও কয়েকদিন চলবে। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির আশেপাশে বা এর বেশিও হতে পারে।
রাজশাহীতে ৫২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপ
“মে মাসের ২-৭ তারিখের ভেতরে তাপমাত্রা প্রশমিত হয়ে আসবে বৃষ্টির ফলে। এসময়ে পুরো বাংলাদেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ২ মে’র আগে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই।”
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে ৫-৩০ এপ্রিল টানা ২৬ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল। ২০১৬ সালে ৬-৩০ এপ্রিল টানা ২৫ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। ২০২৩ সালে ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
এবার তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবসময়ই এসব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি আসে, বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। কারণ এই এলাকাগুলো ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গের পাশে। ওইসব এলাকায় ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল, সেটার আঁচ এসেই পড়ে এখানে।”
বাংলাদেশে মে মাসেও গরমের দাপট যে বেশি থাকে, সে কথা তুলে ধরে ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড মেরিটাইম ইন্সটিটিউটের (এনএওএমআই) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ১৯৭২ সালে এই মে মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, “জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।”