“ডিওএইচএস এলাকাটা একটা সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় আমরা ২০০৪ সাল থেকে বসবাস করছি, কিন্তু কখনও এমন চুরির ঘটনা শুনিনি,” বলেন গাড়ির মালিকের ছেলে।
Published : 17 Mar 2025, 12:03 AM
বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার সড়ক থেকে মাঝরাতে ২০ থেকে ২১ মিনিটের মধ্যে একটি গাড়ি চুরি নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন এক চোর; যিনি এসেছিলেন আরেকটি গাড়িতে করে।
ওই ব্যক্তি প্রথমে একটি গাড়ি নিয়ে ডিওএইচএসের ১২ নম্বর সড়কের ৫৪১ নম্বর বাসার সামনে রাখা চুরি হওয়া গাড়ির পাশে এসে দাঁড়ান। পরে ওই সড়কের কিছু দূর সামনে গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ঘুরে এসে আবার পার্ক করে রাখা গাড়িটির পাশে থামেন। এরপর গাড়ি থেকে নেমে টার্গেট করা গাড়িটির দরজা ‘আনলক’ করেন। কেউ যাতে কিছু বুঝতে না পারেন সেজন্য তিনি প্রথমে সেখান থেকে চলে যান। পরে ফিরে এসে ‘পার্ক’ করে রাখা গাড়িটি নিয়ে চলে যান। এজন্য সময় নেন ২১ মিনিটের মত। কিছু সময় পর ওই একই ব্যক্তি পায়ে হেঁটে এসে প্রথমে তিনি যে গাড়িতে এসেছিলেন সেটি নিয়ে চলে যান।
গত বুধবার মধ্যরাতের এ ঘটনার সিসিটিভি ভিডিও দেখে গাড়ি চুরি করার এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন গাড়িটির মালিকের এক ছেলে।
পরদিন বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় রাজধানী ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেছেন গাড়িটির মালিক অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালামের ছেলে আতিকুল সালাম সীমান্ত।
চুরি যাওয়া টয়োটা করোলা মডেলের গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো গ ১৯-৬৪৪৭। গাড়িটির মালিক আবদুস সালাম মিয়া।
মামলার অভিযোগে সীমান্ত লেখেন, ১২ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসার সামনে গাড়িটি রেখে ভেতরে যান তিনি। পরদিন সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে তিনি আর গাড়িটি দেখতে পাননি। আশেপাশে খোঁজ করেও না পেয়ে সিসিটিভি ভিডিওতে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। মামলার অভিযোগে খোয়া যাওয়া গাড়িটির আনুমানিক দাম ১০ লাখ টাকা বলে তুলে ধরেন।
ভিডিওতে গাড়ি চুরির দৃশ্য
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত ১২টা ৬ মিনিটে সন্দেহভাজন চোর এক্সিও মডেলের একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বারিধারা ডিওএইচএসের ওই এলাকায় প্রবেশ করেন।
প্রথমে ১২টা ১১ মিনিটে ওই গাড়িটি ১২ নম্বর সড়কে প্রবেশ করে বাসার সামনে সড়কে পার্ক করে রাখা টার্গেট প্রাইভেটকারটির কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে।
১২টা ১৩ মিনিটে ১২ নম্বর সড়কের শেষে ইউটার্ন নিয়ে আবার টার্গেট গাড়িটির কাছে এসে দাঁড়ায় এবং এক মিনিটেরও কম কময়ে গাড়ি থেকে নেমে টার্গেট গাড়িটির দরজাটি আনলক করে নিজের গাড়ি নিয়ে চলে যান।
১২টা ২৪ মিনিটে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি টুপি ও মাস্ক পরিহিত অবস্থায় আবার ১২ নম্বর সড়কে হেঁটে প্রবেশ করেন।
১২টা ২৫ মিনিটে ওই ব্যক্তি টার্গেট গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে এক মিনিটেরও কম সময়ে গাড়িটি স্টার্ট করে চলে যান। ১২টা ২৭ মিনিটে গাড়িটি ডিওএইচএস এর স্কুলগেইট হয়ে বেরিয়ে যায়।
১২টা ৪৮ মিনিটে ওই একই গেট দিয়ে সন্দেহভাজন চোর পায়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ১২টা ৫১ মিনিটে প্রথমে প্রবেশ করা এক্সিও মডেলের গাড়িটি চালিয়ে বের হয়ে যান।
সীমান্তের ভাই আতাউস সালাম সৌরভ বলেন, “ডিওএইচএস এলাকাটা একটা সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় আমরা ২০০৪ সাল থেকে বসবাস করছি, কিন্তু কখনও এমন চুরির ঘটনা শুনিনি।
“রাত ১২টার পর ডিওএইচএস এলাকায় প্রবেশ এবং বাহিরের জন্য শেওড়া সংলগ্ন শুধু ‘স্কুল গেট’টি খোলা থাকে। রাতের বেলা অনেক বাড়ির সামনেই প্রায় প্রত্যেকটি সড়কেই একটা-দুইটা গাড়ি রাখা থাকে। আমাদের গ্যারেজেও জায়গা না হওয়ায় গাড়িটি আমরা সবসময় রাতের বেলা বাড়ির সামনেই রাখি।”
তিনি বলেন, “ঘটনার দিনও গাড়িটি লক করেই বাইরে রাখা ছিল। গেইটে এতগুলো সিকিউরিটি গার্ড থাকা স্বত্বেও ওই ব্যক্তি নিজের গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করল, ভেতরে ঘুরাঘুরি করল কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি। চুরি করে গাড়িটি নিয়ে বের হয়ে গেল, আবার পায়ে হেঁটে ভেতরে ঢুকে নিজের গাড়ি নিয়ে বিনা বাধায় বের হয়ে গেল। যে এলাকায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবন, এই এলাকার নিরাপত্তার এই অবস্থা?”
ভেতর থেকে কেউ চোরকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে, এমন সন্দেহ করে তার দাবি, “চোরের ভেতরে যোগাযোগ ছিল। ৯ নম্বর সড়কে সে তার গাড়িটি রাখে, আর সেই সড়কের সিসি ক্যামেরাটি সেদিন কাজ করছিল না। সেজন্য আমরা সন্দেহভাজন গাড়িটির নম্বরটিও শনাক্ত করতে পারিনি।
“পরদিন সকালে ফুটেজ দেখে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমরা ক্যান্টনমেন্ট থানায় গিয়ে মামলা করি। এরপর পুলিশ এসেছিল, তারাও ফুটেজ দেখেছে।”
বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার সিকিউরিটি ইনচার্জ অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ফরিদ বলেন, “ঘটনার সময় আমি ছিলাম না, পরে যাদের গাড়ি চুরি হয়েছে তারা যখন পুলিশ নিয়ে এসেছে তখন আমি জানতে পেরেছি।
“বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কর্তৃপক্ষ বলেছে গাড়ি বাইরে রাখা নিষেধ। যারা রেখেছে তারা নিজ দায়িত্বেই বাইরে রেখেছে। এ বিষয়ে আমি আর কিছু জানি না।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই কাজী তানভীরুল আজম বলেন, “ওই এলাকার অনেকগুলো সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি, সন্দেহভাজন ব্যক্তির মুভমেন্ট পাওয়া গেছে। কিন্তু গেট দিয়ে বের হয়ে শেওরার দিকে চলে যেতে দেখা গেছে।
“যে গাড়িতে করে ওই ব্যক্তি এসেছে সেই গাড়িটির নম্বরটা পাইনি এখনও। তাছাড়া ওই ব্যক্তি ক্যাপ ও মাস্ক পরা ছিল, স্থানীয় কেউ তাকে শনাক্তও করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সে কোথাও না কোথাও থেমেছে নিশ্চই, আশা করছি পাওয়া যাবে।”