বিপিসি বলছে, ফার্নেস তেলের ‘সংকটে’ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
Published : 19 Jun 2023, 12:08 AM
তেল আনতে বিলম্বের পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী গ্রাহকদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস অয়েল বিতরণে ‘রেশনিং’ করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
তবে ফার্নেস তেলের সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সরবরাহ ও বিপণনকারী কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
ফার্নেস অয়েলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এতদিন নিজেরা আমদানি করলেও এখন বিপিসির কাছ থেকে তেল কিনে উৎপাদন চালু রেখেছে।
বিপিসির বিপণন বিভাগের পরিচালক অনুপম বডুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদার ভিত্তিতেই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। এতদিন পিডিবি মালিকানাধীন ১০টি কেন্দ্রই শুধু ফার্নেস অয়েলের মূল গ্রাহক ছিল। চলতি মাসের শুরু থেকে নতুন করে কিছু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রও বিপিসি থেকে তেল নেওয়ার চাহিদা দিচ্ছে।
তার ভাষ্য, “আগে থেকে না জানিয়ে স্বল্প সময়ের নোটিসে এই ধরনের চাহিদা দেওয়ার ফলে আমরাও কিছুটা রেশনিং করে তাদের সরবরাহ করছি। চলতি মাসেই দুই কার্গো তেল আসার সূচি থাকায় পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা নেই।”
বিপিসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ডলার সংকট কিংবা সময়মত সাপ্লাইয়ারদের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় তেল আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে পরিস্থিতি সংকটের পর্যায়ে যায়নি।
বিপিসির আরেক পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) খালিদ আহম্মেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৮ জুন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করা হয়েছে। আগামী ২২ জুন ২৫ হাজার টনের আরেকটি কার্গো বন্দরে ভিড়বে। পরের সপ্তাহে আরেকটি কার্গো আসবে। সুতরাং সংকটের কোনো কারণ নেই।
এদিকে নিজেদের আমদানির বদলে বিপিসির কাছ থেকে তেল কেনার বিষয়ে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন পরিচালক জানান, সম্প্রতি ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পক্ষে ফার্নেস তেল আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে বিপিসির কাছ থেকেই তেল কিনে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সচল রেখেছে। এক্ষেত্রে একটু বিলম্বে হলেও তেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে জ্বালানি পাওয়া সাপেক্ষে ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক ৬৪টি কেন্দ্র থেকে ৪৭ শতাংশ বা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
এরপরেই ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৬ হাজার ১৩৬ মেগাওয়াট বা ২৭ শতাংশ। বাকি পাঁচটি কয়ালাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১১ শতাংশ এবং ডিজেলভিত্তিক আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
অনুপম বড়ুয়া বলেন, “এতদিন আমরা তেল এনে ফেলে রাখলেও তারা নিত না। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিজেদের উদ্যোগে তেল আমদানি করে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাত। এখন কী কারণে তারা বিপিসির কাছে তেল নেওয়া শুরু করেছে সে বিষয়ে আমরা বলতে পারব না।
“তবে আমরা পিডিবির দেওয়া তালিকা ও চাহিদাপত্র অনুসরণ করে সবাইকে তেল দিচ্ছি। পূর্ণ চাহিদা মতো না দিলেও কিছুটা রেশনিং করে দিচ্ছি।”
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে চলতি মাসে বিপিসির কাছে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, গত মে মাসে দৈনিক গড়ে দুই হাজার ৫০০ টন করে ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়েছে। পুরো মাসে বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ৩৪ টন। ১২ জুন পর্যন্ত তিন হাজার ৪৮৯ টন ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ চলতি মাসে হঠাৎ করে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা বেড়ে গেছে।