Published : 15 Aug 2024, 09:20 AM
অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কারণে বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন, পদত্যাগ আর অপসারণের দাবি উঠেছে বহুবার; কাজ হয়নি কোনো কিছুতেই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা ওয়াসায় তাকসিম যুগেরও অবসান ঘটল।
বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাকসিম এ খান। সেখানে তিনি বলেছেন “আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঢাকার ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তাকসিম এ খানকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এমডি স্যারের সঙ্গে কাল কথা হয়েছিল। তিনি রিজাইন দেবেন বলেছিলেন। সন্ধ্যার পর সচিব মহোদয়ের কাছে অনলাইনে রিজাইন লেটার পাঠিয়েছেন বলে জেনেছি।"
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার তাকসিম এ খানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্টাংশ বাতিল করা হল। গত বছরের ১৪ অক্টোবর তাকসিম এ খানের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত জ্যেষ্ঠতম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন।
গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাকসিমের খোঁজ মিলছিল না। সরকার পতনের পর ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ তাকসিম এ খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওয়াসা ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সে কারণে তারা ওয়াসা ভবনে যাচ্ছিলেন না।
তাকসিমের পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনিও সেখানে চলে যেতে পারেন বলে ধারণা করছিলেন ওয়াসার কর্মীরা। তবে ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, দেশেই আছেন তাদের এমডি।
এর মধ্যে ছাত্র জনতা আর বঞ্চিত কর্মীদের দাবির মুখে সরকারে বিভিন্ন দপ্তরের নেতৃত্ব রাতারাতি পাল্টে গেছে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা নিয়ে অন্তর্বর্তকালীন সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত আসছিল না। শেষ পর্যন্ত নিজেই পদ ছাড়লেন তাকসিম এ খান।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তাকসিম এ খানকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয়। এরপর তার মেয়াদ বাড়ানো হয় ৭ দফা। সবশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিভিন্ন মহলের প্রবল আপত্তির মধ্যেও বাড়ানো হয় তার চাকরির মেয়াদ।
তাকসিম খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গত বছর বিদায় নিতে হয় সংস্থাটির বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে। তার আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেছিলেন, “তাকসিম ওয়াসা বোর্ডের সঙ্গে অসহযোগিতা, আইন ভঙ্গ করে ব্যক্তিগত সম্পদের মত স্বৈরাচারী কায়দায় ওয়াসা প্রশাসন পরিচালনা করে ওয়াসাকে অনিয়ম, অপচয় আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন।”
এমডি হিসেবে তাকসিমের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ২০২২ সালে হাই কোর্টে একটি রিট করে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৭ অগাস্ট হাই কোর্ট আদেশ দেয়- তাকসিম গত ১৩ বছর ধরে বেতন-ভাতা বাবদ কত টাকা নিয়েছেন, সেই হিসাব ৬০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
সেইসঙ্গে তাকসিম এ খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাকে অপসারণে বিবাদীদের ‘নিষ্ক্রীয়তা’ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।
যত দিন পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা না হবে, তত দিন ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী তার বেতন নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সবকিছুর পরও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বারবার তাকসিম এ খানের পুনর্নিয়োগ নিয়ে সাফাই গেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা আমাকে বিভিন্ন সময় শক্ত করে ধরেছেন। বারবার সমালোচনা হয়েছে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে নিয়ে। তারা বলেছেন, কেন বারবার ওয়াসার এমডি হিসেবে বর্তমান এমডি থাকেন, কেন এতবার তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে?
“সেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমি বলেছি- কোনো মানুষই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আমাকে নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না এমন মানুষ আমিও নই। কিন্তু বিষয় হল, আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা আমি কতটা ভালোভাবে পালন করতে পেরেছি, কতটা অবদান রাখতে পেরেছি, এটা হল গুরুত্বপূর্ণ।”