“নিম্ন আদালতকে সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ন্যস্ত করা, এবং সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ করার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তার নীতিমালা ঠিক করা জরুরি।”
Published : 01 Nov 2024, 11:37 PM
‘স্বাধীন’ বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করা এবং উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় দেওয়ার পরামর্শ উঠে এসেছে এক আলোচনায়।
শুক্রবার দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কার: মাসদার হোসেন মামলা, রায়ের রজতজয়ন্তী ও বাস্তবায়নের ১৭ বছর’ শিরোনামে আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “বিচার বিভাগ ও তার অধস্তন আদালত পুরোটাই সুপ্রিম কোর্টের অধীনে থাকবে। এজন্য নিম্ন আদালতকে সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ন্যস্ত করা, এবং সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ করার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তার নীতিমালা ঠিক করা জরুরি।
“বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার অর্থ হচ্ছে, নিম্ন আদালতও আর আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে না। কারণ, আইন মন্ত্রণালয় নির্বাহী বিভাগের একটি অংশ এবং এর অধীনে থাকলে বিচার বিভাগকে ‘স্বাধীন’ বলা যায় না।”
২৪ এর র ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান একাত্তরকে ‘রিক্লেইম’ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার এ তিনটি শব্দ ‘বৈষম্যহীন’- শব্দের মধ্যে একাত্তরের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে নতুন করে ধারণ করেছে।”
একাত্তরে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল,’৭২-এর সংবিধানের মধ্য দিয়ে কার্যত তার উল্টোদিকে গিয়েছে বলেও দাবি করেন এই বাম নেতা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “আমাদের আদালতে বাংলায় রায় হলে ভালো হত। ইংরেজিতে দেওয়া রায়টা বোধগম্য হয় না।
“তবে ইংরেজিতে এমন কিছু শব্দ আছে, যা বাংলা করতে পারার মত দক্ষ লেখক আমরা তৈরি করতে পারিনি। আমাদের সংবিধানেও কিন্তু সাধুভাষা-চলিত ভাষার মিশ্রণ আছে।”
ইউপিএল থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত মিল্লাত হোসেন অনূদিত ও সম্পাদিত `বিচার বিভাগ পৃথককরণ প্রসঙ্গ: মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ ও মূল ইংরেজি ভাষ্য’- বই নিয়ে মূলত এই আলোচনা সভা হয়।
লেখক ও গবেষক মিল্লাত হোসেন বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র মূলত জনগণকে নজরদারিতে রাখে। ফলে আইনের পরিভাষাগুলো জনগণের বোঝা জরুরি।”
অনলাইনে যুক্ত হয়ে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, “এই মুহূর্তে একটা বড় ব্যাপার যে আমরা বিচার বিভাগ নিয়েও এখন কথা বলতে পারছি। এটা কতদিন থাকবে, জানি না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রক্রিয়াটাকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা কীভাবে হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা দরকার। আমরা এখন পুরনো প্রজন্মের লোক হয়ে গেছি। আশা করছি আমরা তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে এগোতে পারব।”
দ্য নিউ এইজ-এর সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, “যারা গণতান্ত্রিক না, তারা গণতন্ত্র দেবে- তা আশা করি কীভাবে? গণতান্ত্রিক চর্চা রাজনৈতিক দলসহ সব জায়গায় যদি সম্প্রসারিত না করা যায় তাহলে গণতন্ত্র চর্চা হবে না। জনগণ যেন রায়টা বুঝতে পারে, সকল আইন বাংলা ভাষায় করতে হবে। যারা বিরুদ্ধে রায়টা দেওয়া হচ্ছে, সেও যেন রায়টা বুঝতে পারে।”
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, “সর্বময় ক্ষমতা সরকারকে বা এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এই বিষয়টা যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব থেকে না সরে ততদিন আমরা বিচার বিভাগকে আলাদা করতে পারব না।”
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন মাসদার হোসেন। বক্তব্য রাখেন ইউপিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিনও।