সাড়ে আট বছর আগে রুল জারির আদেশ হয়; এখনও মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়নি।
Published : 03 Aug 2023, 03:51 PM
বিএনপি নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচার-প্রকাশে নিষেধাজ্ঞার মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত না হওয়ায় দিন নির্ধারণ করা যায়নি।
বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য তারিখ ঠিক করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আদালত এ কথা জানায়।
রিটকারীর আইনজীবী মো. কামরুল ইসলামের আবেদনে মামলাটির শুনানির জন্য তারিখ ঠিক করতে বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় এটি আনা হয়।
মো. কামরুল ইসলাম মামলা শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করার আবেদন করলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “রুল তো এখনও প্রস্তুত হয়নি। আগে রুল প্রস্তুত হোক, তখন আদালতে আসেন।”
রিটকারীর পক্ষে কামরুল ইসলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সানজিদা খানম ও নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। এ সময় আদালতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কায়সার কামাল।
রুহুল কুদ্দুস কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলা তো রেডিই হয়নি। রেডি না হলে শুনানি কীভাবে হবে?”
কোনো মামলায় আদালত রুল দিলে তা জারি হয়ে আবার ফেরত আসে। তখন ফাইলে ‘রেডি ফর হিয়ারিং’ দেওয়া হয়। তখনই মামলার শুনানি করা যায়।
সাড়ে আট বছর আগে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়ে আলোচনা তৈরি করার প্রেক্ষাপটে ‘আইনের দৃষ্টিতে পলাতক’ থাকা অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য বা বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন।
বুধবার আইনজীবী মো. কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ওই রিটের রুল জারির পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বন্ধ ছিল।
“ইতোমধ্যে রুল জারি হয়ে এসেছে এবং মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে। তাই এখন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন মনে করে মামলাটির শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়।”
তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করেছিল ওই সময়। রুলে তথ্য ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।
রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে ওই সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও তারেক রহমানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
একইসঙ্গে তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থানের ওই সময়ের অবস্থা জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ মহাপরিদর্শককে তারেকের পাসপোর্টের মেয়াদ জানিয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এজন্য এ দুইজনকে সময় দেওয়া হয়েছিল ৩০ দিন।
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্কিত হওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান (ওই সময়ের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান) তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা।
তার পক্ষে রিটের শুনানি করেছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাহারা খাতুন (প্রয়াত), এসএম মুনীর, শ ম রেজাউল করিম (বর্তমানে মন্ত্রী) ও সানজিদা খানমসহ কয়েকজন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।
তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার রুল শুনানির উদ্যোগ
অবৈধ সম্পদের মামলায় তারেকের ৯, জোবায়দার ৩ বছর সাজা
পলাতক তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা
এ রিট আবেদনে বলা হয়, ‘ফেরারি আসামি’ তারেক রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা ‘অপরাধমূলক’ কথা বলছেন, যা দণ্ডবিধি অনুসারেও অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছেন, যা তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুসারে অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি শান্তিভঙ্গ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছেন। পলাতক এই আসামির বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় পুনরাবৃত্তিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যম পুনরুউৎপাদন না করলে এর পুনরাবৃত্তির সুযোগ থাকবে না।”
আদেশের পর শ ম রেজাউল করিম বলেছিলেন, “এই আদেশের ফলে পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের পাশাপাশি অনলাইনেও তারেকের কোনো বক্তব্য প্রচার করা যাবে না।”
২১ অগাস্টসহ বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক। ওই সময় (২০১৫ সালে) কয়েকটি সভায় বাংলাদেশের ইতিহাসের নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে বিতর্কিত হন তিনি।
এসব বক্তব্যের জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তারেককে। সেইসঙ্গে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও ওঠে।
টানা কয়েকটি সভায় বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশে তারেকের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়েছে, যাতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত।