রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সুন্দরবন হোটেলের পাশে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের এক পাশের সড়কে ধসের এক দিন বাদে অন্য পাশেও ধস দেখা দিয়েছে।
Published : 28 May 2015, 10:01 PM
ধস ঠেকাতে সেনা সহায়তা চান আনিসুল
রাজউকের ‘গাফিলতি’, নির্মাতাদের ‘অনিয়ম’
এদিকে এই ধস নিয়ে অভিযোগের মুখে থাকা রাজউককে পাশ কাটিয়ে দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ন্যাশনাল ব্যাংক নির্মাণাধীন টুইন টাওয়ারের পাইলিং এলাকার উত্তর-পূর্ব অংশে নতুন ধস দেখা দেয়।
কলাবাগান থানার ওসি মোহাম্মদ ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন করে যেখানে ধস নেমেছে সেখানে নির্মাণ শ্রমিকরা থাকলেও আগের দিনের ঘটনার পর তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাই হতাহতের ঘটনা এড়ানো গেছে।
বুধবার সকালে বৃষ্টির মধ্যে বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক লাগোয়া হোটেল সুন্দরবন এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের নির্মাণাধীন টুইন টাওয়ারের মাঝের ১৫ ফুট প্রশস্ত সড়কটি ধসে পাশের পাইলিংয়ের গর্তে চলে যায়।
মাটি আলগা হয়ে বেইজমেন্টের একটি অংশের দেওয়াল গর্তে চলে যাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে ছয়তলা সুন্দরবন হোটেল। ওই গলির সামনের অংশে বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কেও ফাটল তৈরি হয়।
সেখানে বালু ফেলে ঠেকানোর চেষ্টা চলার মধ্যেই নতুন করে ধস দেখা দেয়।
নাজমুল নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, রাত ৯টার দিকে নির্মাণাধীন টুইন টাওয়ারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিকট শব্দ শুনতে পান তিনি।
“কাছে গিয়ে দেখি, উত্তর পাশে বেশ কিছু অংশ ধসে পড়েছে। সেখানে থাকা কয়েকটি বিলবোর্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ঘটনাটি শুনেছি। তবে সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।”
বুধবার এই ধসের পর রাজধানীতে যে ভবনের নকশা অনুমোদনকারী রাজউককে দায়ী করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস।
তবে বুধবার রাতে পরিদর্শন করে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন রাজউকের জনবল ঘাটতির কথা তুলে ধরে তদারকির ক্ষেত্রে তাদের অসামর্থ্যের কথা সাংবাদিকদের বলেন।
এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজউক। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়ার কথা মন্ত্রী জানালেও তার কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি।
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘটনার জন্য ভবন মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়েছে।
“রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় ইমারত নির্মাণস্থলে যে কোনো দুর্ঘটনা, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো, ভূমি ধস রোধ, নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা, আশপাশের ভবন, অবকাঠামো ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের।”
জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৬, ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা ২০০৮ এবং ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২-তে এসব দায়দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা আছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান না মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে বা নির্মাণকালে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার সব দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।”
ন্যাশনাল ব্যাংকের এই ভবনটি নির্মাণ করছে এম এস কনস্ট্রাকশনস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।