মিয়ানমারে পরিকল্পিত নিপীড়ন ও বিতাড়নের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা উগ্রপন্থি বিভিন্ন সংগঠন ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
Published : 28 May 2015, 02:08 PM
কুয়েতে ওআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের ৪২তম বৈঠকে এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষ থেকে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশের এই শঙ্কার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে তারা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে। উগ্রপন্থিদের সঙ্গে জড়িয়ে গেলে এ অঞ্চলে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন সংগঠনে তাদের যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।”
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জোর করে ‘বাঙালি’ হিসাবে নিবন্ধিত করা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
দেশে নির্যাতনের মুখে থাকা রোহিঙ্গারা গত কয়েকবছর ধরেই প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে।
কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দুটি শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩৪ হাজার শরণার্থী থাকলেও এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার হয়ে মাদক ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মানবপাচারের বিষয়টি জোরেশোরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উচ্চরিত হওয়ার মধ্যেই সম্প্রতি মিয়ানমারের নৌবাহিনী সাগরে ভাসমান অভিবসন প্রত্যাশীদের দুটি নৌকা আটক করে।
পরে আটকদের তারা ‘বাঙালি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালায় বলে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি এবং এ বিষয়ে বিশ্বকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং গত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে মুসলিমদের নির্যাতিত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের বাইরে আরেকটি সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, “চুক্তিতে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সমাজের সদস্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।”
নিজেদেরকে ‘বাঙালি’ হিসাবে প্রমাণিত না করা পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সে দেশের আদমশুমারির বাইরে রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ওআইসি মহাসচিবের আহ্বানের প্রতি তিনি সমর্থন জানান।
রোহিঙ্গা পাচারের বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, রোহিঙ্গা ইস্যু এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশের জন্যই সমস্যা।
“এজনই এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।”
মাহমুদ আলী পরে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেদনো লেলটার মারসুদির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও মানবপাচার সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।