ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে যাওয়া গারো তরুণীকে সহায়তার ক্ষেত্রে এক থানার পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে।
Published : 25 May 2015, 09:17 PM
নির্যাতিত নারীদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন এমন একজন বলেছেন, পরামর্শেই সীমাবদ্ধ ছিল ওই থানার কর্মকাণ্ড।
এরই মধ্যে ওই ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে বিলম্ব কেন ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করা হবে না, অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে সোমবার রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষারত ওই গারো মেয়েটিকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে পাঁচ ব্যক্তি ধর্ষণ করে। পরে তারা মেয়েটিকে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে ফেলে রেখে যায়।
এ ঘটনার পর রাতে দুই থানা ঘুরে শুক্রবার দুপুর নাগাদ ভাটারা থানায় মামলা করে ধর্ষিত তরুণীর পরিবার।
ওই মেয়ের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়ে রাজধানীর তুরাগ থানায় যাওয়ার পর তাদের অন্য থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে দুই থানা ঘুরে তারা মামলা করতে সক্ষম হন।
আইন অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় গেলে তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল পুলিশ সদস্যদের করণীয় নিয়ে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত মহিলা পুলিশসহ সঠিক তথ্য দিয়ে নির্দিষ্ট থানায় পৌছে দেওয়ার যে দায়িত্ব পুলিশের ছিল, তা এখানে একেবারেই অনুপস্থিত। এখানে পুলিশের যে দায়িত্ব ছিল, সেটা তারা পালন করেনি।”
এছাড়া এক থানার সঙ্গে আরেক থানার সমন্বয় অনুপস্থিত ছিল বলেও অভিযোগ করেন সালমা আলী।
তিনি বলেন, “কো-অর্ডিনেশনের অভাবে মেয়েটিকে তিনটি থানায় ঘুরতে হয়েছে মামলা দেওয়ার জন্য।”
অ্যাডভোকেট সালমা আলী জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা হয়েছে কোনো নারীকে রাতে থানায় রাখা যাবে না। এছাড়া মহিলা পুলিশ নেই এমন জায়গায় হেফাজতে রাখা যাবে না।
“অথচ তুরাগ থানায় পৌঁছানোর পর থেকে আরও দুটি থানায় যাওয়ার পথে মেয়েটির ক্ষেত্রে এ আইনের কোনো প্রয়োগ ঘটেনি।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তুরাগ থানার ওসি মাহবুবে খোদার বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “ঘটনার বিস্তারিত শুনে দেখা গেছে এটি আমাদের থানা এলাকার নয়। তাই কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার ভাটারা বা গুলশান থানায় যাওয়ার জন্য তাদের পরামর্শ দেন।”
তবে এসময় কোনো পুলিশ ফোর্স তাদের দেওয়া হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।
ওসি বলেন, “তাদের বাসা দলিপাড়া এলাকায়, এজন্যই হয়ত তুরাগ থানায় প্রথম এসেছিল। ওই গারো মেয়ের সাথে তার ১০-১২ জন আত্মীয় এবং নিজস্ব গাড়ি ছিল।”
তিনি দাবি করেন, ভোর সাড়ে ৪টায় তারা থানায় এসে শুধু মামলা করতে চেয়েছিল, চিকিৎসা বা অন্য থানায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা কোনো সাহায্য চায়নি বলে তারাও তৎপরতা দেখাননি।
“তাদের কথা অনুযায়ী থানার ডিউটি অফিসার গুলশান ও ভাটারা থানায় কথা বলে ঘটনাস্থল জানার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাদের পরিচিত সহকারী কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে এবং তার পরামর্শেই তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমার থানা থেকে গুলশান থানায় যান।”
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়নি কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে মামলা দিতে হবে। সে কারণে থানায় যাওয়ারই পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ঘটনার দিন রাত ৪টায় তুরাগ থানায় মামলা করতে যায় ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ও তার স্বজনরা। সেখানে মামলা দেওয়া না যাওয়ায় পরে অটোরিকশা করে গুলশান থানায় যান বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
তবে ‘ঘটনাস্থল’ বিবেচনায় সেই থানায়ও মামলা করতে পারেনি মেয়েটি।
তুরাগ থানা থেকে নিরাপত্তা দেওয়া না হলেও গুলশান থানা থেকে স্পর্শকাতর বিবেচনা করে মেয়েটিকে পুলিশ ফোর্সের সহায়তায় ভাটারা থানায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গুলশান থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার বিবরণ শুনে গুলশান থানা নয়, ভাটারা থানাই উপযুক্ত বিবেচনায় ভিকটিম ও তার স্বজনদের সেখানে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।”
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে না পাঠানোর কারণ হিসেবে তিনি জানান, সাধারণত ঢাকার বাইরে থেকে মামলা এলে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। শহরের ভিতরে হলে আগে নির্দিষ্ট থানায় পাঠিয়ে মামলা করা হয়।
“ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হলে আরও ঘোরাঘুরি হত। প্রাথমিক পদক্ষেপ পুলিশি সাপোর্ট দেওয়ার জন্যই থানায় পাঠানো হয়েছে।”