বর্ষবরণ উৎসবের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর একমাস পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
Published : 15 May 2015, 05:07 PM
পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যায় সেই ঘটনার ভিডিও এবং ছবি গণমাধ্যমে এলেও পুলিশ বলেছে, নিপীড়নের শিকার নারী বা ঘটনার সময় আশপাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য বা সহযোগিতা তারা তদন্তের ক্ষেত্রে পায়নি; বরং ফোনে গালমন্দ শুনতে হয়েছে।
ঘটনার সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও সে সময় প্রশ্ন ওঠে, যার তদন্ত করে তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে পুলিশের তদন্ত কমিটি।
পুলিশের গাফিলতি তদন্তে গঠিত ওই কমিটির সদস্য সচিব মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর গত ৭ মে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন।
মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শাহেদুর রহমান, শাহবাগ থানার পরিদর্শক সাঈদুল হক ভূঁইয়া এবং এসআই আশরাফের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, সহকারী কমিশনার শাহেদুর টিএসসি এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে ওই ঘটনার ‘গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন’।
বর্ষবরণের দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে এক দল যুবক নারীদের ওপর চড়াও হয়। তাতে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন।
সে সময় চার নিপীড়ককে ধরে এসআই আশরাফসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন।
অভিযোগের পর এসআই আশরাফকে প্রত্যাহার করে যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করার পাশাপাশি সেদিন পুলিশের গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে কমিটি করা হয়।
জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ অভিযোগ করুক আর না করুক; পুলিশ তো আর বসে থাকতে পারে না। ঘটনার তদন্ত করে যাদের কর্তব্যে অবহেলা পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।”
এসআই আশরাফ যে সেদিন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে কথা না বলে দুই নিপীড়ককে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সে সময় শাহবাগ থানার পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা সাঈদুল হক ভূঁইয়ার কথাতেও।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই, আমি কয়েকদিন আগে তুরাগ থানায় বদলি হয়েছি। পহেলা বৈশাখে কয়েকজন স্থানীয় যুবক যে দুইজনকে পুলিশের হাতে দিয়েছিল, তাদের শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আশরাফ ছেড়ে দিয়েছিল।”
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাঈদুলের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ এসেছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। তবে নিপিড়নকারীদের কাউকে পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি।
যৌন নিপীড়কদের চিহ্নিত করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো ছবি অথবা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তির পরিচয় বা কোনো ধরনের তথ্য থাকলে একটি নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে জানাতে অনুরোধ করেছিল পুলিশ।
কর্মকর্তারা বলছেন, তথ্যদাতার নাম-পরিচয় গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তাতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ওই নম্বরে আসা ফোনকল থেকে বিভিন্ন জনের গালাগালও শুনতে হয়েছে পুলিশকে।
জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, “কোনো ভিকটিম নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনায় অভিযোগ করে কোনো তথ্য দেয়নি, বরং প্রায়ই ভিওআইপি নম্বর থেকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে।”
এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে ফোন করে নারীরা কীভাবে তাদের জীবনে বিভিন্ন সময়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তা পুলিশকে বলেছেন। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে বলেও পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর জানান।
“তবে যে কারণে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে কেউ তথ্য দিচ্ছে না,”
যৌন নিপীড়কদের শনাক্ত করতে না পারার জন্য ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরও দায়ী করেন গোয়েন্দা পুলিশের এই উপ-কমিশনার।
তিনি বলেন, যদি সে সময় দুই নিপীড়ককে ছেড়ে দেওয়া না হত, তাহলে অপরাধীদের ‘খুব সহজেই’ শনাক্ত করা সম্ভব হত।