সমুদ্রপথে মানব পাচার নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১১ যাত্রীকে আটক করা হয়েছে, যাদের ‘জাল’ ভিসায় লিবিয়ায় পাঠানো হচ্ছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
Published : 12 May 2015, 07:13 PM
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের আটক করা হয় বলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ইমিগ্রেশন) তারেক আহমেদ জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাই দুবাইয়ের একটি বিমানে ১১ যাত্রী দুবাই যাচ্ছিলেন। সবার পাসপোর্টে লিবিয়ার জাল ভিসা সন্দেহে তাদের আটক করা হয়।”
সমুদ্রপথ ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাচারকারীরা আকাশপথকে এখন পাচারের ‘নিরাপদ’ রুট হিসাবে বেছে নিয়েছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা।
এর আগে সোমবার রাতে নগরীর বড়পোল এলাকা থেকে তিন মানব পাচারকারীকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের কাছ থেকে লিবিয়ার ভিসাযুক্ত জাল পাসপোর্টি উদ্ধার করা হয়।
রাতে হালিশহরের বড়পোল মোড় এলাকার এমডিসি টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয় আলী আকবর (৩৯), বাহার উদ্দিন (২৮) ও মো. শাহ বায়েজিদ উল্লাহকে (২২)।এরপর সকালে বিমানবন্দরে ধরা পড়েন ১১ জন।
সিআইডির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুসলিম জানান, হালিশহর থেকে আটক তিনজনের কাছে পাওয়া ৩৩টি পাসপোর্টের মধ্যে ৩০টি যন্ত্রে পাঠযোগ্য (এমআরপি)।এরমধ্যে ১৭টিতে লিবিয়া এবং একটিতে মিসরের ভিসা আছে। ওই সব ভিসা জাল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সিআইডি কার্যালয়ে পাসপোর্টগুলোয় লিবিয়ার তিন ধরনের ভিসা দেখা গেছে। লাল রঙের ভিসায় ‘স্টেট অব লিবিয়া’ লেখা। নীল রঙের দুই ধরনের ভিসায় দুইভাবে শুধু ‘লিবিয়া’ লেখা।
ওই তিন জনের কাছে ‘মোজাম্বিক হাই কমিশন, নিউ দিল্লি’ লেখা একটি সিল, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকেট বুকিংয়ের ১২টি স্লিপ পাওয়া গেছে।
তাদের সঙ্গে বিমানবন্দরে আটকদের যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আকাশপথে মানব পাচারের বিষয়টিকে নতুন মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুসলিম।
“আমরাও এতে অবাক হয়েছি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহার করে গত এপ্রিল থেকে তারা মানবপাচার করছে বলে জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা চার-পাঁচশ লোককে এভাবে লিবিয়া পাচার করেছে বলে আমাদের ধারণা,” বলেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসহায়-দরিদ্রদের বিদেশে ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তারা পাচার করে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
যাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে তাদের মধ্যে নয়জনই কুষ্টিয়ার বাসিন্দা। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মাদারীপুর, যশোর, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, জামালপুর ও ফরিদপুর জেলার বাসিন্দাও রয়েছেন।
“প্রত্যেকের কাছ থেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা করে নেওয়ার কথা আটকরা জানিয়েছেন। প্রথমে তাদের ফ্লাই দুবাই এবং এয়ার এরাবিয়ার বিমানে করে দুবাই পাঠানো হয়। সেখানকার বিমানবন্দরে তাদের জন্য লিবিয়ার টিকেট পাঠানো হয়। ওই বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের মুখোমুখি না হয়ে কোনোভাবে পরের টিকেটে তারা লিবিয়া যায়,” বলেন মুসলিম উদ্দিন।
পাচারকারী সন্দেহে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে হালিশহর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে নৌকাযান বা মাছ ধরার ট্রলারে করে সাগরপথে মালয়েশিয়ার পথে মানবপাচারের ঘটনা আলোচনায় রয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। সম্প্রতি থাইল্যান্ডে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়।
গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডে মানবপাচারকারীদের একটি বন্দি শিবিরে গণকবর থেকে ২৬ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করার পর থাই, মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় পুলিশের মতো বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করেছে।
এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে কক্সবাজারেই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পাঁচ সন্দেহভাজন মানবপাচারকারী নিহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে কয়েকজনকে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের একটি প্রতিবদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা পাচারের শিকার হয়েছেন। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।