পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের যৌন নিপীড়নকারীদের সাংগঠনিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক না করে অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
Published : 20 Apr 2015, 10:25 PM
বর্ষবরণে যৌন হয়রানি: ওরা কারা?
পুলিশের তদন্তে এখনও চিহ্নিত হয়নি নিপীড়করা
দেশের চিহ্নিত কয়েকজন ‘তথাকথিত’ ধর্মীয় নেতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক কটু মন্তব্য করে নিপীড়কদের পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন বলে মনে করেন তারা।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা থেকে কার্জন হল পর্যন্ত মানববন্ধনে দাঁড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এতে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এছাড়াও শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কার্জন হলের সামনে মানববন্ধন এবং পাশাপাশি চারুকলার সামনে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন হয়।
টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করে ছাত্র ইউনিয়ন, যাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা; যোগ দেয় হিজড়া জনগোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন সদস্যও।
এক সপ্তাহের মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সমিতির সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য যে সংঘবদ্ধ এরকম জঘন্য নিপীড়ন চালিয়েছে, তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এ বিষয়ে কালক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে।”
মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, “যারা নিপীড়ন চালিয়েছে তারা এই সংগঠনের সদস্য, ওই সংগঠনের সদস্য- এসব কথা না, আমরা এসবের বিচার চাই। এধরনের নির্যাতন চালিয়ে আমাদের পহেলা বৈশাখের উৎসব বন্ধ করা যাবে না, এটা তাদেরকে বুঝতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামালউদ্দিন বলেন, “আইনের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি না দেওয়া হলে এ প্রবণতা কখনই বন্ধ হবে না। এছাড়া তেঁতুল হুজুর নামে পরিচিত একজন ধর্মীয় নেতা যেভাবে নারীদের অবমাননা করে বক্তব্য দিয়েছেন তা এসব ঘটনাকে উৎসাহিত করছে। আবার এইসব হুজুরদেরই মেইনস্ট্রিম পলিটিক্যাল পার্টিগুলো তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করছে- তা আমাদের সমাজের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
আওয়ামী লীগসমর্থিত নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, “এ ধরনের ঘটনার মোকাবেলায় প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অভিজিৎ রায়কে যেমন চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে হত্যা করা হয়েছিল, একইভাবে এই মেয়েদেরকেও চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে নিপীড়ন চালানো হয়েছে। এসবই সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর চক্রান্তের ফল।”
এদিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে কর্মসূচিতে বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিপীড়নের জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
“পদেও থাকবেন কিন্তু দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করবেন না, তাহলে পদচ্যুত হবেন; পথে পথে ঘুরবেন। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আপনাদের মতো কারও দায়িত্ব অবহেলার দায় আমাদের মাথায় নেব না।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “সংগঠিত গ্রুপ সংঘবদ্ধভাবে পাশবিক নিপীড়নের ঘটনা ঘটিয়েছে। কোনো ধরনের রং না দিয়ে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ দায় রাষ্ট্রের, কিন্তু বিমূর্তভাবে রাষ্ট্রকে দায়ী করলে হবে না।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার, টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম ভূঁইয়া, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আখতার সুলতানা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা ও তাহসিনা রহমান।
ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারিক, সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, পহেলা বৈশাখে লাঞ্ছিত এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দীসহ আরো অনেকে।