শিশু সাংবাদিকদের লেখা প্রতিবেদন ও রচনা নিয়ে প্রকাশিত হল ‘আমার কথা আমাদের কথা’, যে বইয়ে শিশুদের চিন্তার মানচিত্রই তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করছে শিশু সাংবাদিকতায় বিশ্বের প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
Published : 19 Apr 2015, 05:41 PM
দেশের বিভিন্ন জেলার শতাধিক শিশু সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক রোববার এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
আয়োজকদের পক্ষে ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এ আয়োজনের অংশীদার গ্রামীণ ফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেনও ছিলেন মঞ্চে।
‘আমার কথাও যাবে বহুদূর’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে রোববার বিকাল ৪টায় হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের উৎসব হলে এ অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তৌফিক ইমরোজ খালিদী হ্যালোর পথচলার চিত্র সবার সামনে তুলে ধরেন। হ্যালোর সাংবাদিকদের প্রতিবেদনের কারণেই যে শেষ পর্যন্ত কয়েকটি সমস্যার সমাধানের পথ তৈরি হয়েছে- সে কথাও তিনি তুলে ধরেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, “আমরা এ আয়োজন অব্যাহত রাখব। আমি মনে করি এটি আমাদের দায়িত্ব।”
“সারা দেশে যেসব স্কুলে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো চলছে কি না সেই খবর আমি হ্যালোতে দেখতে চাই।”
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই শিশু সাংবাদিকদের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা দেন।
শুরুর দুই বছরের মধ্যে ‘হ্যালো’ সাড়া জাগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তোমরা যে দক্ষতা অর্জন করছ তা আরও বৃদ্ধি পাবে। তোমরা সমাজের অসঙ্গতি, সংকট, অনিয়ম ও ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরবে।”
শিশুদের সংগ্রহ করা খবর নিয়ে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট এর যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ। হ্যালোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সব কাজেই যুক্ত রয়েছে শিশু ও কিশোর সাংবাদিকরা।
হ্যালোর নির্বাহী সম্পাদক মুজতবা হাকিম প্লেটো জানান, শিশুরা সারাবছর এ ওয়েবসাইটে যেসব প্রতিবেদন ও মতামত লিখেছে তার মধ্যে থেকে বাছাই করা লেখা নিয়েই ‘আমার কথা আমাদের কথা’।
২০৮ পৃষ্ঠার এই বইয়ে ১০৭ জন শিশু সাংবাদিকের মোট ১০১টি লেখা স্থান পেয়েছে। প্রতিবেদক ও লেখকদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড থেকে প্রকাশিত এ বইটির গায়ে দাম লেখা হয়েছে ৩৫০ টাকা।
এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশু-কিশোর হ্যালোর সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হয়েছে বলে এর সম্পাদক অনিন্দ্য রহমান জানান।
সংবাদভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। প্রশিক্ষিত শিশু সাংবাদিকরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের তত্ত্বাবধানে মূলধারার গণমাধ্যমেও ভূমিকা রাখছে।
‘শিক্ষার মান বাড়াতে হবে’
শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, “এত সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা ভয়ের ব্যাপার। আমি খুবই আনন্দিত। এরা খুবই স্বার্থক; এদের চিন্তাভাবনা, দক্ষতা ও কার্যকারিতা এরা প্রকাশ করেছে।”
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ কোটি ৫২ লাখ জানিয়ে নাহিদ বলেন, ৯৯ শতাংশ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনা সম্ভব হলেও তাদের ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
“আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছিলাম তাতে আমরা অনেকটাই সফল। মাধ্যমিক পর্যন্ত ছেলে-মেয়েতে সমতা এসেছে। মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নতুন প্রজন্মের সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই।”
পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ‘ঢালাও পাসে’ শিক্ষার মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সে বিষয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
“শিক্ষার মান রাতারাতি পরিবর্তন করে দেব এ আশা করাটা অসম্ভব। তবে খুব দেরি করারও সময় নেই। এজন্য একটু সময় প্রয়োজন। সময় এখন শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করার।”
নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তা তাদের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান নাহিদ।
“শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসাবে গড়ে তোলা। নতুন প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ, সততা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত পরিপূর্ণ মানুষ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।”
এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপনসহ শিক্ষাখাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
“আমরা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দরিদ্র হলেও মেধার দিক থেকে দরিদ্র নই।”
শিক্ষার প্রসারে যেসব ক্ষেত্রে ভুল হচ্ছে তা তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের ভুলগুলো শুধরে নেব। সমস্ত শিক্ষা পরিবার তোমাদের জন্য গর্বিত। আমি সব শিশু সাংবাদিককে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, এ প্রজন্মের শিশুরা অনেক বেশি ভাগ্যবান, কারণ তারা বেড়ে উঠছে ইন্টারনেটের যুগে।
“ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বাংলাদেশে খুব একটা এগোয়নি। মোবাইল ইন্টারনেট অনেক বেড়েছে, আর তা বাচ্চাদের সাহায্য করছে। তারা (শিশু সাংবাদিক) ই-মেইল করে খবর পাঠিয়ে দেখতে পারছে খবরটি ছাপা হচ্ছে কি না।”
হ্যালোর এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “যারা আমাদের এই উদ্যোগে অংশীদার হতে চান, এই শিশুদেরকে সাহায্য করতে চান, তারা যেন এগিয়ে আসেন। অনেকেই অনেক কিছু করছেন। আমার মনে হয় আরও কিছু করার আছে, বিশেষ করে তাদের কাছে (শিশু সাংবাদিক) উন্নতমানের ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে।”
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ‘পাঁচজন শিক্ষককেও এক লাখে’ পরিণত করা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হ্যালোর শিশু সাংবাদিকদের কলম কীভাবে অনিয়ম ঠেকিয়ে দিয়েছে তার কিছু নজির অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
তিনি জানান, একটি উপজেলায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্মীরা একটি খেলার মাঠ দখল করে। হ্যালোতে সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মাঠটি দখলমুক্ত হয়।
পৃষ্ঠপোষক হিসাবে হ্যালোর সঙ্গে থাকায় গ্রামীণ ফোনকে শিশুদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, “আমি আশা করব বাচ্চাদের জন্য তাদের এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে।”
গ্রামীণ ফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, “হ্যালোর সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। গ্রামীণ ফোন নাগরিক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট।”
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেট যেন শিশু-কিশোরদের জন্য ‘নিরাপদ হয়’, গ্রামীণ ফোন সেই চেষ্টা করছে।