রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ফাঁসির আসামি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রী কারাগারে পৌঁছেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
Published : 06 Apr 2015, 03:38 PM
একটি মাইক্রোবাসে করে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মোট ১৬ জন কারাগারে পৌঁছান। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তারা কারা ফটক দিয়ে ভেতরে যান বলে সেখানে উপস্থিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক কামাল তালুকদার জানান।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কামারুজ্জামানের স্ত্রী নুরুন্নাহার, তিন ছেলে হাসান ইকবাল, হাসান ইমাম ও আহমেদ হাসান; মেয়ে আতিয়া নূর; কামারুজ্জামানের ভাই কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফিয়া নূর; এই জামায়াত নেতার ভাতিজা আরমান, ভাতিজী আরিফা ও মলি; শ্যালক রুম্মান; ভাগ্নি রোকসানা জেবিন, জিতু, মুন ও মনি এবং বিউটি নামে এক আত্মীয়া রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন শিশু।
তবে তাদের কেউ বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, কারা কর্তৃপক্ষ দুপুরে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে দণ্ড কার্যকরের আগে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগের বিষয়টি জানায়।
সে অনুযায়ী বিকাল ৫টার মধ্যে তাদের যাওয়ার কথা থাকলেও পরিবারের সদস্যরা পৌঁছান তার দেড় ঘণ্টা পর।
অবশ্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে আইনজীবীরা বিকাল ৪টায় কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষতের সময় চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়নি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই কামারুজ্জামানকে কারাগারে রাখা হয়েছে। ওই রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়ার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
এর বিরুদ্ধে কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করলে সোমবার তাও খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
রায়ের পর এক ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের আগে তার প্রাণভিক্ষার আবেদন ও পরিবারের সাক্ষাতের বিষয়টিই কেবল বাকি আছে।
নিয়ম অনুযায়ী কামারুজ্জামান অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে রাষ্ট্রপতি তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে অথবা কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে সে সময় কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন।
এদিকে সকালে রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরপরই পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। র্যা বের টহল দলকেও নিয়মিত ওই এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসমাইল নামে এক র্যা ব সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এরকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু রিভিউ খারিজ হয়ে গেছে, সেজন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই কারাগার এলাকার নিরাপত্তার জোরদার করা হয়েছে।”
দুপুরের পর দীর্ঘ দুটি বাঁশ ও ত্রিপল কারাগারের ফটক দিয়ে ভেতরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সঙ্গে নেওয়া হয় দুই বস্তা বালি।
কারাগারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফাঁসির মঞ্চের ওপরে আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহারের জন্য বাঁশ ও ত্রিপল নেওয়া হয়েছে।
“এর আগে কাদের মোল্লার ফাঁসির সময়ও এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল যাতে আশেপাশের কোনো উঁচু ভবন থেকে দেখা না যায়।”
আর ফাঁসির দড়ি ওজন নিতে পারে কি-না তা পরীক্ষার জন্য বালির বস্তা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী। তিনি বলেছেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী কাজ করতে কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে।