তবে দুটি জরিপের ফলাফলে তৃণমূলকে আগেরবারের চেয়ে এবার বেশি ব্যবধানে এগিয়ে রাখা হয়েছে।
Published : 02 Jun 2024, 12:24 AM
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে আগেরবারের চেয়ে নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি এবার আরও ভালো ফল করতে যাচ্ছে বলে আভাস দিচ্ছে জরিপের তথ্য।
সারা দেশের সঙ্গে সাত ধাপের ভোটের শেষ ধাপে শনিবার পশ্চিমবঙ্গেও লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর কেন্দ্রফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ হওয়া শুরু হয়।
অন্তত পাঁচটি সংস্থার জরিপ বলছে, এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে ২ থেকে ৭টি আসন হারাতে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে উচ্ছ্বাস দেখা যাওয়ার খবর দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে লোকসভার আসন ৪২টি, যার মধ্যে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ২২টি পায় মমতার তৃণমূল ও ১৮টি মোদীর বিজেপি।
অবশ্য দুটি জরিপের ফলাফলে তৃণমূলকে আগেরবারের চেয়ে এবার বেশি ব্যবধানে এগিয়ে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চায় না তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
কেন্দ্রফেরত জরিপগুলোর ফলাফল সমন্বয় করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের পথে নরেন্দ্র মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ; যারা ৩৫০টি আসন পেতে যাচ্ছে বলে আভাস মিলেছে।
৫৪৩ আসনের লোকসভানির্বাচনের পর জরিপে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসসহ বিজেপিবিরোধী দলগুলোর জোট ‘ইন্ডিয়া’, তারা ১৪২টি আসন পেতে পারে।
নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেতে প্রয়োজন ২৭২ আসন; যেখানে ভোট দিয়ে আসা ভোটারদের জরিপভিত্তিক তথ্যেবিজেপির টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিত মিলছে।
এনডিটিভি লিখেছে, কেন্দ্রফেরত জরিপ যেমন ত্রুটিমুক্ত নয়, তেমনি তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতও নয়। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও এ ধরনের জরিপে ভোটারদের অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়।
আনন্দবাজার বলছে, এবার এ রাজ্যে ভোটের হারেও দুই নম্বরে নেমে যেতে পারে তৃণমূল, তেমনই অনুমান করছে কয়েকটি জরিপ সংস্থা। পরিস্থিতি এমন হলে পশ্চিমবঙ্গের ‘দিদি’ খ্যাত মমতার নিজের রাজ্যে গুজরাটের ‘দাদা’ খ্যাত মোদীর হাসি এবার আরও চওড়া হবে।
২০১৪ সালে যেখানে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মাত্র দুটি লোকসভা আসন ছিল, ২০১৯ সালে এসে মোদী তা ১৮-তে উন্নীত করেন। মোদীকে এর কৃতিত্ব দেয় বিজেপি।
পাঁচ বছর আগের সবশেষ নির্বাচনের প্রচারে মোদী ও মমতার বাকযুদ্ধ সাড়া ফেলেছিল। এবারও তাদের প্রচার ঘিরে রাজ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়।
জরিপ কী বলছে?
‘এবিপি-সি ভোটার’ এর কেন্দ্রফেরত জরিপে উঠে এসেছে ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে যাচ্ছে ২৩-২৭টি, যেখানে দলটি ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে যেতে পারে। ৭ থেকে ৯টি কমে তৃণমূলের আসন ২২ থেকে নামতে পারে ১৩ থেকে ১৭টিতে, যেখানে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে একসময় বাম রাজত্ব ছিল। গতবারের লোকসভায় বামেরা খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল, যেখানে কংগ্রেস মাত্র দুটি আসন জিতেছিল।
এবার বাম-কংগ্রেস মিলে ১ থেকে ৩টি আসন পেতে পারে, যেখানে তাদের ভোটের হার হতে পারে কম-বেশি ১৩ দশমিক ২ শতাংশ।
‘নিউজ় টোয়েন্টিফোর ও টুডেজ চাণক্য’ এর কেন্দ্রফেরত জরিপেও বিজেপিকে জয়ের পথে এগিয়ে রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে এবার বিজেপি পেতে পারে ২৪টি আসন (কম-বেশি হতে পাঁচটি) এবং ভোট পেতে পারে ৪৪ শতাংশ। মমতার দল সেখানে জিততে চলেছে ১৭টি আসন (কম-বেশি হতে ৫টি), ৪১ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দলটির।
কংগ্রেসের জন্য পূর্বাভাসে আরও খারাপ খবর দিচ্ছে জরিপকারী সংস্থা দুটি। ভোটারদের কাছ থেকে পাওয়া ধারণা অনুযায়ী সংস্থা দুটি বলছে, কংগ্রেসের আসন দুটি থেকে কমে এবার একটিতে নামতে পারে।
বাম-কংগ্রেসের জন্য তারা কোনো ভালো বার্তা দেয়নি। জরিপকারীরা বলছে, বাম-কংগ্রেস মিলে এবার ১১ শতাংশের মত ভোট পেতে পারে।
‘ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া’ এর কেন্দ্রফেরত জরিপে তৃণমূল খুব বাজে ফল করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। তাদের জন্য সম্ভাব্য আসন ধরা হয়েছে ১১ থেকে ১৪টি আসন, যেখানে দলটির ভোটের হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে।
এ দুই জরিপ সংস্থা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে এবার বিজেপি পেতে পারে ২৬ থেকে ৩১টি আসন, যেখানে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে শূন্য থেকে দুটি আসন। বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট হতে পারে ১২ শতাংশ। অন্যান্য দল মিলে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেতে যাচ্ছে।
প্রতিটি জরিপে বলা হয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের আসন এবং ভোট কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে। কিছু কিছু আসনে সংখ্যালঘু ভোটও তৃণমূলের কাছ থেকে সরে যেতে পারে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। পদ্মশিবিরের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি আসন, তারা ভোট পেয়েছিল ৪৩.৭ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছিল দু’টি আসন। বামেরা ছিল শূন্য। গতবার বাম-কংগ্রেসের মিলিত (যদিও জোট ছাড়াই লড়েছিল) ভোট ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ।
এবার সেই ভোট শতাংশ বদলের আভাস মিলেছে বলে জানাচ্ছে আনন্দবাজার পত্রিকা। বিজেপির ভোট বেশ খানিকটা বাড়তে পেতে পারে, যেখানে উল্টো কমতে পারে তৃণমূলের ভোট। তবে বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোটের খুব একটা হেরফের নেই।
‘ইন্ডিয়া নিউজ-ডি ডাইনামিক্স’ এর জরিপ বলছে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবার ২১টি, বিপরীতে তৃণমূল ১৯টি আসন পেতে পারে; বাকি দুটি অন্যান্য দল।
বিজেপি ২১ থেকে ২৫ এবং তৃণমূল ১৬ থেকে ২০টি আসন পেতে পারে বলে ‘রিপাবলিক ভারত-ম্যাট্রিজ’ তাদের জরিপে পূর্বাভাস দিয়েছে।
অবশ্য তৃণমূলের পক্ষে এবার আরও বেশি সুবাতাসের আভাস দিয়েছে ‘টিভি ৯ ভারতবর্ষ-পোলস্ট্রাট’ নামে জরিপকারীরা, যারা বিজেপির ১৭টি সম্ভাব্য আসনের বিপরীতে মমতার দলের জন্য রেখেছে ২৪টি।
‘নিউজ ন্যাশন’ বিজেপিকে ১৯টির বেশি আসন দিতে রাজি নয়, সেখানে তৃণমূলকে তারা ২২টি আসনে জয়ের পথে পেয়েছে।
প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে সাত ধাপে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ হয় শনিবার, যার শুরু হয়েছিল ১৯ এপ্রিল।
ভোটগ্রহণ শেষে বুথ ফেরত জরিপের দিকে নজর রেখেছে ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারত।