রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন পরিচালনায় নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আগামী ২৮ এপ্রিল ভোট হবে।
Published : 18 Mar 2015, 02:59 PM
পোস্টার-বিলবোর্ড সরাতে হবে শুক্রবারের মধ্যে
‘মুখ প্রচারের’ লড়াই ঢাকা দক্ষিণে
মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীরা ২৯ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। কমিশন তা যাচাই-বাছাই করবে ১ ও ২ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বুধবার ইসির সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এই তফসিল ঘোষণা করেন।
এর আগে কমিশনের সদস্য ও সচিবকে নিয়ে ভোটের দিন-ক্ষণ চূড়ান্ত করেন তিনি।
মেয়াদপূর্তির কারণে ঢাকা সিটি নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে দীর্ঘ আট বছর ধরে। এরইমধ্যে আগের সীমানা ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণের জন্য গঠন করা হয়েছে দুটি আলাদা সিটি করপোরেশন।
আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়াদ রয়েছে জুলাই পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়েই সেখানে ভোটের আয়োজন হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন এমন এক সময়ে এই তফসিল ঘোষণা করল, যখন আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ ও হরতাল চলছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল সিটি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী সমর্থন চূড়ান্ত করলেও বিএনপি বা তাদের শরিকরা এখনো কিছু জানায়নি।
তারপরও এবার উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা প্রকাশ করে সিইসি তিন সিটির ৬১ লাখ ভোটারকে নিঃসঙ্কোচে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের অনুরোধ করেন আচরণবিধি মেনে চলার জন্য।
কাজী রকিব বলেন, “আমরা তফসিল ঘোষণা করলাম। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আগাম প্রচারণামূলক সব পোস্টার বিলবোর্ড নিজ দায়িত্বে নামিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অপর চার নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ; ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এবার এই সিটি নির্বাচন হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝখানে। সূচি অনুযায়ী ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার মনোবিজ্ঞান প্রথম পত্র এবং চারু ও কারুকলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
অবশ্য নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক করার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসেছিল কমিশন। এক দিনের পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন করে কমিশনকে সেদিন ভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয় সময় পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
আর বিএনপি জোট এখনকার মতো অবরোধ-হরতাল চালিয়ে গেলে এসএসসির মতো এইচএসসি পরীক্ষাও শুক্র ও শনিবার নেওয়া ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপায় থাকবে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহা পরিচালক অধ্যাপিকা ফাহিমা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটের দিনের পরীক্ষা অন্য তারিখে নেওয়া হবে। যথা সময়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে কমিশনকে আমরা জানিয়েছি।”
নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে ইসির উপ সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ এবং উত্তরে মো. শাহ আলমকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের দায়িত্ব পেয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছেন ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। আর দক্ষিণের ৫৭টি ওয়ার্ডে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন ভোটার।
মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ঢাকার দুই সিটি মিলিয়ে ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৬ ভোটারের বিপরীতে এবার প্রায় দুই হাজার ভোটকেন্দ্র প্রয়োজন হবে।
আর চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডের ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ জন ভোটারের জন্য সাড়ে সাতশ ভোটকেন্দ্র প্রয়োজন হবে বলে আব্দুল বাতেন জানান।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালে। ২০০৭ সালে তার মেয়াদ পূর্ণ হলে শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশন বেশ কয়েকবার নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়।
এরপর ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করে উত্তর ও দক্ষিণে আলাদা দুটি সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার। পরের বছর ২৪ মে ভোটের তারিখ রেখে কাজী রকিবের কমিশন একবার তফসিলও ঘোষণা করে। কিন্তু সীমানা জটিলতা নিয়ে আদালতের আদেশে তা স্থগিত হয়ে যায়।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগ ঢাকায় ভোট করার বিষয়ে কমিশনকে অনুরোধ জানায়। এর মধ্য দিয়ে আট বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা এ নির্বাচন আয়োজনের পথ তৈরি হয়।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী রকিব ২০১২ সালের স্থগিত তফসিল বাতিল ঘোষণা করে নতুন দিন তারিখ ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১০ সালের ১৭ জুন। সে অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রামেও নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটের দিন দুই মহানগরে সাধারণ ছুটি থাকবে বলে কমিশন জানিয়েছে।