অবরোধে বাসে দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন।
Published : 14 Jan 2015, 07:18 PM
বুধবার হাসপাতালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানোর সাম্প্রতিক প্রবণতার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে রংপুরের মিঠাপুকুরের জায়গীরহাটে শাপলা হিমাগারের সামনে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে বাসে আগুনে এক শিশুসহ চারজন নিহত হন। গুরুতর দগ্ধ আরও কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
‘খলিল স্পেশাল’ নামের বাসটি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে ঢাকা যাচ্ছিল।
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার মালতিবাড়ী দিগর গ্রামের ব্যবসায়ী রাশেদ খান মেনন (৪৫)।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসটির চালকের চার সিটের পরেই আমার সিট। ঘুম ঘুম লাগছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। চমকে উঠে দেখি চালকের পেছনে বাসের ভেতরে আগুন জ্বলছে। সকলেই চিৎকার করছেন। আর আল্লাহর নাম নিচ্ছেন। আমি জানালার গ্লাস ভেঙে লাফিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।
“এরপর আর কিছু জানি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে শুয়ে আছি। আমার ডান পা ভেঙে গেছে।”
দেশে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান সংশ্লিষ্টদের প্রতি। এছাড়া সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান সরকারের প্রতি।
মেননের পাশের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল আমীন।
তার গ্রামের বাড়ি উলিপুরের বজরা গ্রামে। গত ৩ জানুয়ারি তার দাদি মারা গেছেন। সেদিন তারা গাজীপুর থেকে গ্রামের বাড়ি যান। মঙ্গলবার মা, বোন, ফুফু, মামীসহ ১১জন ওই বাসে করে গাজীপুর ফিরছিলেন।
তার বোন একই কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আফসানা মিমি, মামী ও ফুফুকে নামাতে গিয়ে আহত হন। তিনিও আহত হয়েছেন। দগ্ধ হন ফুফু ও মামী।
এরমধ্যে ফুফুকে বুধবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
“রাজনীতির নামে যারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে, তাদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দেওয়া হোক। এই নোংরা রাজনীতি চাই না,” বলেন তিনি।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন আনোয়ার হোসেন (৪৩)। গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। বাড়ি উলিপুরের ধনিরাম গ্রামে। আগুনের তার শরীরের বিভিন্ন অংশ কালচে হয়ে গেছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন-চাইর মিনিটেই বাসটা জ্বলি গেলো। আমার সামনের সিটের একটা বাচ্চাসহ দুই মহিলা জ্বলি কয়লা হয়া গেলো। চাই না, চাই না এমন রাজনীতি। যারা আগুন দেচে তামার ফাঁসি চাই।”