চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাধনপুরের শীলপাড়ায় এক পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পর ১১ বছর পেরোলেও এখনও শেষ হয়নি এর বিচার কাজ।
Published : 17 Nov 2014, 08:43 PM
সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে গিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া। দুই দফা অভিযোগপত্র দেওয়ার পর এই মামলার বিচার কাজ শুরু হলেও দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ বাদী বিমল শীল।
প্রায় তিন বছর আগে ৩৮ আসামিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠনের সাত মাস পরে পুনরায় নতুন ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
মামলার বাদী বিমলের সাক্ষ্য নেওয়ার মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০১২ সালের ১৫ মে।
সোয়া দুই বছরে এই মামলার ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে মাত্র নয়জনের। এর মধ্যে মামলাটির আদালতও বদল হয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা কাটাতে বাদী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাশেম বলছেন, অতীতে রাজনৈতিক প্রভাব এবং বাঁশখালী কালিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আমিন চেয়ারম্যান উচ্চ আদালতের আদেশে বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে থাকায় তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিমল শীল হতাশা প্রকাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে গিয়ে বিচার প্রক্রিয়া আটকে আছে। এর কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখছি না।”
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের শীলপাড়ার তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতদের মধ্যে চারদিন বয়সী এক শিশুও ছিল।
সাত তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) হাত ঘুরে অষ্টমজন সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি বিএনপিনেতা আমিন চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আদালত ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।
২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আগের অভিযোগ বাদ দিয়ে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়।
একই বছরের ১৯ এপ্রিল নতুন করে অভিযোগ গঠন করা হয় ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম জেলার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় ২০১২ সালের ১২ মে।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আলোচিত এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে থাকা এ মামলা ২০১২ সালের ২ অক্টোবর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।
মামলাটি নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০১৩ সালের নভেম্বরে পুনরায় তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফেরত আসে।
আগামী ২৬ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য আছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
পিপি আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে কার্যত কোনো অগ্রগতি ছিল না এই মামলার।
“বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী এই ঘটনার মূল হোতা হলেও তার চাচাত ভাই জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সে সময় প্রতিমন্ত্রী থাকায় এই মামলার তদন্ত কাজ প্রভাবিত ছিল।”
এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত আমিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত থাকায় তা ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে আবুল হাশেম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিএনপি নেতা হওয়ায় সে বাঁশখালীর স্থানীয় সাক্ষীদের প্রভাবিত এবং সাক্ষীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে।
আইনজীবী আবুল হাশেম আমিন চেয়ারম্যানের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন।