সুযোগ নেই বলে অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করলেও যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত মো. কামারুজ্জামানের পক্ষে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পর্যালোচনায় আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
Published : 05 Nov 2014, 09:50 PM
দণ্ড কার্যকরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে মাহবুবে আলম মত জানানোর পর কারা কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়ার কথা আইনমন্ত্রী জানানোর মধ্যেই বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেন জামায়াত নেতার আইনজীবীরা।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপির জন্য অপেক্ষা করছি। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলেই আমরা রিভিউয়ের আবেদন জানাব।”
সাধারণ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যালোনার আবেদন জানানোর সুযোগ থাকলেও যুদ্ধাপরাধের জন্য বিশেষ আইনের মামলার ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের মত।
খন্দকার মাহবুব বলেন, “সংবিধানের ১০৫ ধারা অনুযায়ী এ রায় রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে। যদি ১০৫ ধারার ক্ষমতা এই বিচারের ক্ষেত্রে কার্যকর না-ও হয়, তবুও ন্যায়বিচারের স্বার্থে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ আবেদন শুনবেন বলে মনে করি।”
এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রেও বহু বিতর্কের পর রিভিউ আবেদন করা হয়েছিল এবং তা খারিজ দিয়েছিল আপিল বিভাগ।
খন্দকার মাহবুব বলেন, “কাদের মোল্লার সময় আমরা রিভিউ পিটিশন করেছিলাম, সে বিষয়ে কোনও রায় আপিল বিভাগ এখনও দেয় নাই। সেই রায় যদি পেতাম, যদি বলা হত রিভিউ পিটিশন করা যাবে না, তাহলে আমরা পিটিশন করতাম না।
“তবে রায় যেহেতু পাই নাই, অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব বলবেন রিভিউ পিটিশন করা যাবে না, সেটা আমরা মানতে পারি না।”
কামারুজ্জামানের আপিলে সর্বসম্মত রায় না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে খন্দকার মাহবুব বলেন, “সোহাগপুর বিধবা পল্লীর ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা-ও সেটি দ্বিধাবিভক্ত রায়। এই সোহাগপুরের এত করুণ কাহিনী গত ৪১ বছরে কেউ কখনও বলেনি। হঠাৎ এই সোহাগপুরের ঘটনায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দেওয়া হল!”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
“আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত, দেশীয়ভাবে বির্তকিত।এ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত না করে, বিচার যাতে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, আমাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যবস্থা করুন।”
মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে বিচারে সরকার পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পর ১৯৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটের অভিযোগ পাওয়া যায়, যাদের কাছে অস্ত্র, লুটের মালামালসহ বিভিন্ন প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।
“তাদের বিচার করে শাস্তির জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। কথা ছিল সেখানে শুধু যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি আর্মি ও সহযোগী বাহিনীগুলোর বিচার করা হবে। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান ওই ১৯৫ জনকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করে। তাদের কোনও বিচার করা হয়নি।”
“তাদের আগে বিচার করুন। আসল অপরাধীদের ছাড়া যারা হত্যা করেছে, যারা ধর্ষণ করেছে, যারা লুট করেছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে সহায়তাকারীদের বিচার হয় না,” বলেন তিনি।