সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই, আঁধার নামছে; তখন আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠল বে’স গ্যালারিয়া; পুরো বাংলাদেশ যেন ঝুলছে এখানে; সঙ্কট-সম্ভাবনা, আনন্দ-বেদনা, জয়-পরাজয়, জীবনের লড়াই- সময়ের কথা যেন বলছে ফ্রেমবন্দি সব ছবি।
Published : 23 Oct 2014, 07:33 PM
‘ডটকম’ জগতে বাংলাদেশের সংবাদকে নিয়ে যাওয়ার দিশারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আট বছরের পথচলা উদযাপন গত আট বছরের বাংলাদেশকেই মেলে ধরেছে যেন।
অন্য পথে চলার মধ্য দিয়ে যার শুরু, দিনটি উদযাপনেও প্রথাগত পথে না হেঁটে খানিকটা ভিন্নভাবেই হাঁটতে চেয়েছে এই ইন্টারনেট সংবাদপত্রটি; আর তারই প্রতিফলন ঘটছে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের বে’স গ্যালারিয়ায় এই আয়োজনে।
গত আট বছরের বাংলাদেশ কে জানতে যেসব আলোকচিত্র প্রতিনিধিত্বশীল, তা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ইন্টারনেট সংবাদপত্র হিসেবে যাত্রা শুরুর দিনটি উদযাপন করছে, যার উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ভিন্নধর্মী এই আয়োজনের বিষয়ে বলেন, “ইন্টারনেট সংবাদপত্র হিসেবে গত আট বছরে ফটো সাংবাদিকতায় আমরা যে কাজগুলো করার চেষ্টা করেছি- তা প্রদর্শনের জন্যই এ আয়োজন। এ প্রদর্শনী ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে গত আট বছরের ওপর একটি চকিত আলোকপাত।”
বাংলাদেশের সংবাদকে ইন্টারনেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “তাদের কর্মকাণ্ড সত্যি সত্যি বিস্ময়কর। অর্জিত সাফল্য অত্যন্ত বিস্ময়কর। এটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই অত্যন্ত গর্বের।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তার পথচলার শুরু উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ করে শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকা বরেণ্য এই ইতিহাসবেত্তাকে।
বরেণ্য এই ইতিহাসবেত্তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনীর একটি অংশ, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহমদ কর্নার’।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “শোক নয়, আমরা তার বর্ণাঢ্য জীবন স্মরণ করতে চেয়েছি।”
তরুণ বয়সে কেমন ছিলেন এই শুদ্ধসারথি- সাদাকালো ছবিতে তার দেখা মিলবে আগামী পাঁচ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলার পুরোটা সময়। সেইসঙ্গে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের পাশাপাশি শিক্ষকদের এই শিক্ষকের পারিবারিক জীবনও উঠে এসেছে ফ্রেমে।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীনের জীবনের ওপর আলোকপাত করেন তারই ছাত্র অধ্যাপক আফসান চৌধুরী।
গ্যালারির প্রবেশ পথেই প্রখ্যাত এ ইতিহাসবিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খোলা হয় শোকবই। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ধীরাজ কুমার নাথ এতে লিখেছেন, “অজস্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এ মহান কীর্তিমান বরেণ্য সন্তানকে।”
অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীনকে যে সর্বজনশ্রদ্ধেয় বলা হত, তার প্রতিফলন ঘটল প্রদর্শনী দেখে গৃহিনী শিরীন আক্তারের কথায়- “একজন গুণী ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য দেওয়ায় এ পত্রিকাকে ধন্যবাদ।”
‘আনন্দপাঠ’ এর সাড়ে পাঁচশ পৃষ্ঠায় দুই বাংলার ১৬ জন লেখকের ছোট গল্প, ১১টি অনুবাদ গল্প, চারটি সাক্ষাৎকার এবং দুটি নিবন্ধের সমাবেশ ঘটিয়েছে এর সম্পাদনা পর্ষদ।
এই স্মরণিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন তার জেল জীবনের স্মৃতিকথা। সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক বেবী মওদুদের লেখায় এসেছে পাঁচ দশক আগের সেই দিনের কথা, যেদিন বান্ধবী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়।
আনন্দপাঠ উদ্বোধনের সময় মঞ্চে সাবেক ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক মহিউদ্দীন আহমেদ।
৭৭ বছর বয়সী আলোকচিত্রী সাইদা খানম প্রয়াত সালাহ্উদ্দীন আহমদের স্ত্রীর ছোট বোন।
প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
এই উদযাপনে শামিল হয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ধীরাজ কুমার নাথ, সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধু জুলিয়াস ফ্রান্সিসসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘ফ্রেমবন্দি বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই আলোকচিত্র ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে, সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম, ফসলের মাঠ থেকে দেশ শাসনের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা থেকে সরকার প্রধান, বিশ্ব রাজনীতির শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের সমন্বয় ঘটেছে ফটোফ্রেমে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নানা সময়কে ক্যামেরাবন্দি করেছে এই প্রদর্শনী। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, তার স্ত্রী শেরি ব্লেয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নানা রূপও ধরা পড়েছে সময়ের চিত্রে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের গণজাগরণের সেই স্ফূলিঙ্গ, হেফাজত কাণ্ড, রামুযজ্ঞসহ সংবাদ হয়ে ওঠা এই সময়কার নানা ঘটনাও স্থান নিয়েছে এই প্রদর্শনীতে। তার সঙ্গে রয়েছে গ্রামের মেঠোপথ, জেলেজীবন, ছোট শিশুর হাতে পাঠ্যবই থেকে শুরু করে এক সবুজ বাংলার ছবিকথন।
“গত আট বছরের নিউজ ইভেন্ট ছাড়াও পুরো বাংলাদেশের চিত্র ফ্রেমে বন্দি করা হয়েছে. যা সব শ্রেণির মানুষের মনে খোরাক জোগাবে। সময়ের চলার পথে এক অনন্য সাক্ষী হয়ে থাকবে এ ফ্রেমবন্দি বাংলাদেশ।”
অনুষ্ঠান শুরুর পরপরই গ্যালারিতে নানাবয়সীদের আনাগোনা শুরু হয়, তাদেরই একজন শিরীন আখতার মুগ্ধ কণ্ঠে বলেন, “এই অভিজ্ঞতা অসাধারণ!”
‘গ্রহণযোগ্যতা, বস্তুনিষ্ঠতাই বড় শক্তি’
শুরুটা হয়েছিল ২০০৫ সালে; অন্যান্য বার্তা সংস্থার মতো ‘বিডিনিউজ’ তখন সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য খবর সরবরাহ করত। দেশের অন্য সংবাদ সংস্থাগুলো টেলিপ্রিন্টারে খবর সরবরাহ করলেও বিডিনিউজ এ কাজটি শুরু করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
২০০৬ সালে বার্তা সংস্থাটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদলের পর এর খোল-নলচে বদলে যায়। সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নেতৃত্বে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশের প্রথম ডটকম কোম্পানির রূপ দেয়, নতুন আঙ্গিকে এর পরিচয় হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে।
নতুন মাধ্যম হিসেবে পথচলার বছরপূর্তি উদযাপনের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহযাত্রী হয়ে পাঠকরা বলছেন, গ্রহণযোগ্যতা, বস্তুনিষ্ঠতাই এই ইন্টারনেট সংবাদপত্রের বড় শক্তি।
প্রদর্শনী দেখে পাঠক এ কে এম কামরুল আহসান বলেন, “আট বছরে এসে আমরা বলতে পারি, সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা, নৈতিকতা ও গ্রহণযোগ্যতাই এর বড় শক্তি।”
সংবাদ পরিবেশনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুন্সীয়ানাই একে গণমানুষের কাছাকাছি নিয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, “আমার প্রথম পছন্দ বিডিনিউজ। ল্যাপটপ খুললেই প্রথমে দেখি এই পত্রিকাটি।”
প্রদর্শনী দেখতে দেখতে সাবেরা আহমেদ কলি বলেন, “দেশে থাকলে সবসময় অনলাইনে এ পত্রিকাটিই পড়ি। দেশের বাইরে থাকলে তো সংবাদের ভরসা বিডিনিউজই।”
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক আবুল হাসান মাহমুদ আলীও বলেন, “বিডিনিউজের সাফল্য অত্যন্ত ঈর্ষনীয়। বলতে কোনও দ্বিধা নেই, আমি নিজে সব সময় এটা দেখি।”
২০১১ সালে যেখানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে মাসে ২০ লাখের মতো ভিজিট হতো, এখন তা পৌঁছেছে দুই কোটির কাছাকাছি। বর্তমানে প্রতিমাসে ইউনিক ভিজিটর প্রায় ৪০ লাখ। মুদ্রণশিল্পের মানদণ্ড অনুযায়ী ইন্টারনেট পাঠকের এই সংখ্যা ছাপাখানায় প্রকাশিত সব সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যার সমতুল্য।
এই তথ্য জেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ““এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, চার মিলিয়ন ইউনিক ভিজিটর স্ট্যাগারিং ফিগার।”
এ সাফল্য ধরে রাখতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতি পরামর্শ দেন তিনি।