কথিত বন্দুকযুদ্ধে পা হারানোর সাড়ে তিন বছর পর র্যাবের দ্বিতীয় মামলা থেকেও অব্যাহতি পেলেন ঝালকাঠির তরুণ লিমন হোসেন।
Published : 16 Oct 2014, 12:39 PM
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানোর পর সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারক না থাকায় এক বছরের বেশি সময় লিমনের অব্যাহতির বিষয়টি ঝুলে ছিল।
অবশেষে ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম আবু শামীম আজাদ বৃহস্পতিবার সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলা প্রত্যাহারে র্যাবের আবেদন মঞ্জুর করে লিমনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী র্যাবের করা অস্ত্র আইনের মামলা থেকেও গত বছর ২৯ জুলাই লিমনকে অব্যাহতি দেয় ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
অবশ্য মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও সন্তুষ্ট নন লিমন বা তার মা হোনোয়ারা বেগম।
লিমনের ‘পঙ্গুত্বের জন্য দায়ী’ ছয় র্যাব সদস্যের বিচার চেয়েছেন তারা।
আদালতের আদেশের পর লিমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রীয় বাহিনী র্যাব আমার জীবন থেকে কেবল কয়েকটি বছরই নয়, আমার বাঁ পা চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। আমি একজন কলেজ ছাত্র এ কথা বারবার বলার পরও তারা আমার পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়।”
বর্তমানে সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিমন বলেন, “আমার মা ছয় র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় যেদিন দোষীদের বিচার হবে, সেদিনই আমি সন্তুষ্ট হতে পারব।”
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে রবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আহত হন লিমন। সাতুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে লিমন সে সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা তার এক পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন।
ওই ঘটনার পর লিমনকে সন্ত্রাসী হিসাবে উল্লেখ করে অস্ত্র আইনে এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দুটি মামলা করে র্যাব।
অন্যদিকে ছেলেকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ছয় র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম।
ওই ঘটনা গণমাধ্যমে এলে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো র্যাবের সমালোচনা করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও লিমনের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাবের দায়ের করা মামলা দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
ওই আবেদন জমা পড়লে গত বছর ২৯ জুলাই ঝালকাঠির ২ নম্বর বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক কিরণ শংকর হালদার অস্ত্র আইনের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন, অব্যাহতি পান লিমন।
কিন্তু হাকিম আদালতে বিচারক না থাকায় সরকারি সিদ্ধান্তের পরও অন্য মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন ঝুলে থাকে ১৫ মাস।
সম্প্রতি ঝালকাঠীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নতুন বিচারক যোগ দেওয়ায় সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন লিমন।
বরিশাল র্যাব-৮ এর তখনকার ডিএডি লুৎফর রহমান সহ ছয় জনের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের করা মামলাটি ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
লিমনের আইনজীবী আক্কাস শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী এখন পর্যন্ত ১১ বার সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। ফলে বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর আবার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।”
হেনোয়ারা বেগম আদালতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি যে মামলা হরছি, হেয়ার রোজ রোজ তারিখ পাল্ডায়। আমার নির্দোষ পোলারে যারা পঙ্গু হরছে হ্যাগে বিচার না অওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি অইবে না ।”