রাজধানীর ২৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৪টি বিদ্যালয়ের জমি, ভবন, শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখল করে রেখেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রভাবশালী মহল ও সংগঠন।
Published : 22 Sep 2014, 05:15 PM
এর মধ্যে সাতটি বিদ্যালয়ের জমিতে রয়েছে ওয়াসার পাম্প; আছে কমিউনিটি সেন্টার, গ্যারেজ, দোকান ও ক্লাবঘর থেকে শুরু করে আনসার বাহিনীর কার্যালয়ও।
কোনো কোনো বিদ্যালয়ের জমিতে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার, মসজিদ ও ঈদগাহ। বস্তিবাসী থেকে শুরু করে অবাঙালিরাও দখলে রেখেছেন কয়েকটি বিদ্যালয়ের জমি।
বাকি বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো থেকে শুরু করে জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে আছেন বলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া ওই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে। এসব জমি দখলমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ঢাকা জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার ২৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৪টির জমি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনা বেদখলে আছে।”
এসব জমি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কাজী আখতার হোসেন জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আইনি ব্যবস্থা নিয়ে জমি থেকে শুরু করে বেদখল হওয়া বিভিন্ন স্থাপনা উদ্ধার করা হবে।”
আর শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলছেন, “যেসব জমি নিয়ে মামলা আছে সেসব মামলা চালানোর পাশাপাশি অন্য বেদখল স্থাপনা উচ্ছেদেও মামলা করা হবে।”
পুরান ঢাকার সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক হাজার ৮০ বর্গফুট জমিতে বসেছে ওয়াসার পাম্প। এই বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলায় রমনা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এছাড়া মিরপুরের শহীদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডেমরার মাতুয়াইল ২ নম্বর, গুলশানের মেরাদিয়া, মতিঝিলের আইডিয়াল মুসলিম বালক/বালিকা ও মাদারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ জমিতে রয়েছে ওয়াসার পাম্প।
ধানমণ্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ দখল করে বসানো হয়েছে ওয়াসার পাম্প। এই বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিতে পরিচালিত হয় ধানমণ্ডি ল’ কলেজের কার্যক্রম।
কোতয়ালি থানার হাজী মাজহারুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা রয়েছে আনসার বাহিনীর দখলে।
মিরপুরের আ. মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ জমির মধ্যে ২০ শতাংশ এবং মোহাম্মদপুর থানার কামরাঙ্গীচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ অবাঙালিদের দখলে রয়েছে।
আর মিরপুরের খলিলুর রহমান ও কাজী ফরিদ এবং শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বস্তি।
রমনা রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো না থাকায় সেখানে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার।
দক্ষিণখান বিদ্যালয়ের জমিতে তৈরি হয়েছে ঈদগাহ মাঠ, আগারগাঁও তালতলা বিদ্যালয়ের জমিতে হয়েছে মসজিদ। আর খিলগাঁও মডেল বিদ্যালয়ের জমি দখল করে গ্যারেজ করা হয়েছে।
এফ কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলায় বংশাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কর্যক্রম চলে। আর তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ব্যবহৃত হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে।
আরমানিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮ দশমিক ০২ শতাংশ জমির মধ্যে পাঁচ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি সাবেক প্রধান শিক্ষক নামজারি করে নিয়েছেন।
কোতোয়ালি থানার নাজিরাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষে মালামাল রেখে তালা দিয়ে রেখেছে নাজিরাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ জমির মধ্যে ২৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ জমি দখলে রেখেছে ‘খেলাঘর’। আর এই বিদ্যালয়ের সামনের তিনটি দোকান গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতির দখলে।
সূত্রাপুরের এম এ আলীম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ জমির মধ্যে পাঁচ শতাংশ জমি দখল করে সেখানে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
মাতুয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২১ শতাংশ জমির মধ্যে ১৫ শতাংশ জমি মূল ভবনসহ দখল করা হয়েছে।
সূত্রাপুর থানার বিপিন রায় এবং আগারগাঁও তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ক্লাব ঘর।
এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি, ভবন বা শ্রেণিকক্ষ প্রভাবশালী মহল ও স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন দখলে রেখেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও দখল করে রেখেছে সরকারি সম্পত্তি।
এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদে এর আগে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিবেদনে।
কোনো কোনো বিদ্যালয়ের জমি বেদখল হওয়ার পর তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিছু স্কুলে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে অনুরোধও জানানো হয়েছে। এসব বিষয়ও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।