দেশের অনেক জেলা এখন বন্যা কবলিত। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। অনেক জেলায় গবাদি পশু নিয়ে মানুষ বাস করছে একসঙ্গে। কেউ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ কিংবা উঁচু রাস্তায়, কেউ ঘরের মধ্যে মাচা বেঁধে অবস্থান করছে।
Published : 30 Aug 2014, 09:26 PM
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। যেকোনো সময় মা-বাবা কিংবা স্বজনদের একটু অমনোযোগিতায় তারা পানিতে ডুবে যেতে পারে।
বগুড়ায় শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে ‘আঁচল’ নামের একটি সংগঠন।
আঁচলের পরিচালক সাজিয়া আফরিন জিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য চিথুলিয়া গ্রামে তারা কাজ করছেন। পানিতে ডুবে যেন কোনো শিশু না মারা যায় এ জন্য শিশুদের এবং মাদের নিয়ে ওরিয়েন্টশন করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের পরিচালক ড. সাইদুর রহমান মাশরেকী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বন্যায় বাচ্চাদের ওরিয়েন্টেশন করা খুবই জরুরি। এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। দেশে প্রতিবছর ১৮ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
তাই, শিশুদের ৪ বছর থেকে সাঁতার শেখানো খুবই জরুরি এবং এক থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের রাখতে হবে চোখে চোখে।
তিনি জানান, ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় এক গবেষণায় দেখা যায়, বন্যায় শিশুদের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশুদের পানিতে পড়ে মৃত্যু ঘটে বেশি। এই সময়টা বাড়ির গৃহকর্তা কাজে বাইরে থোকেন, বড় বোন কিংবা ভাই স্কুল কিংবা অন্যত্র থাকে এবং মা দুপুরের রান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, বন্যায় চিকিৎসার পাশাপাশি মেডিকেল টিমকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা যেন শিশুদের নিরাপত্তার জন্য অভিভাবকদের সতর্ক করে দেন, কেননা বন্যায় শিশুরা থাকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার বিবিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় বাড়িতেই শিশুরা ইচ্ছামতো উঠানে খেলাধুলা করছে। অথচ, বাড়ির চারদিকে থই থই করছে পানি। এছাড়া বাড়ির পাশের ডোবাটি তো রয়েছেই।
কোনো কোনো পরিবার বাড়ি ছেড়ে না দিয়ে ঘরের মধ্যেই মাচা করে থাকছে। এক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুদের পানিতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
ধুনট উপজেলার বন্যা কবলিত চিথুলিয়া গ্রামের শাহ আলম জানান, তার একমাত্র শিশুকে নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছেন। স্ত্রী রান্নাবান্নার কাজ করেন। একাজে তাকে সহযোগিতা করার কেউ নেই। এ সময় ৭ বছরের শিশুটি এদিকওদিক ছোটাছুটি করে। অথচ বাড়ির পাশেই দুটি পুকুর। এছাড়া পাশে বন্যার পানি তো আছেই।