হল-মার্ক কেলেঙ্কারির মামলায় সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীরসহ অন্য কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
Published : 06 Aug 2014, 09:18 PM
বুধবার সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে এ অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি বলেন, “তার (হুমায়ুন কবীর) বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকার পরেও কেন তাকে গ্র্রেপ্তার করা হচ্ছে না তা নিয়ে কমিটি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
“মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেছে এটা দুদক ও পুলিশ বলতে পারবে।”
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন) শাখা থেকে হল-মার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় হুমায়ুন কবীর ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন।
গত বছরের নভেম্বরে হুমায়ুন কবীর ছাড়াও ব্যাংকের তখনকার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল হকসহ পলাতক ১৬ আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় ঢাকার জজ আদালত।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় হল-মার্কের এমডি তানভীর মাহমুদসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে ১১ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
দেশের আলোচিত এ ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় এর আগে হল-মার্ক গ্রুপের শীর্ষ কর্তা ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যম সারির কয়েকজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন হুমায়ুন কবীর।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার সময় সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি।
২০১২ সালের ৪ অক্টোবর হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ মোট ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করে দুদক।
সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে হলমার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা।
দুদকের উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বিশেষ দল এ জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করেন।
নবম সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও ঘটনাটি তদন্ত করে। ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছিল ওই কমিটি।
বুধবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) নিয়েও আলোচনা করা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “প্রতিনিয়ত দেশ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে চলে যাচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় ৮-১০ টি দেশে অনেক বাংলাদেশী তাদের সেকেন্ড হোম তৈরি করছে।”
বৈঠকে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশী (দ্বৈত নাগরিক) কর্তৃক সংঘটিত অর্থ পাচার মানি লন্ডারিং বিষয়ে আলোচনা হয়।
কমিটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বিভিন্ন ইউনিট যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এনবিআর ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যথাযথ সমন্বয় বাড়ানোর সুপারিশ করে।
এছাড়া কমিটি যে সব শিল্পপতি, ব্যবসায়ীসহ বাংলাদেশী নাগরিকের বিদেশে অবৈধ অর্থ ও বাড়ি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টালিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
কমিটি চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বৈধ পথে বিদেশে অর্থ নেয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার সুপারিশ করেছে।
এছাড়া বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া এবং বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সময় দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং পেশাগত জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, নাজমুল হাসান, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মো. শওকত চৌধুরী ও আখতার জাহান অংশ নেন।
এছাড়া বৈঠকে অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সচিব মো. মাহবুবুর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।