লন্ডনে বাংলাদেশি-অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস পৌর এলাকার মেয়র লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি তহবিল বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে পরিদর্শক নিয়োগ করেছে যুক্তরাজ্য সরকার।
Published : 04 Apr 2014, 10:32 PM
পশ্চিম লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেট পৌরসভায় ‘সুশাসনে ব্যর্থতা, দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও প্রতারণা’র অভিযোগ তদন্তে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মেয়র লুৎফরের বিরুদ্ধে আর্থিক বরাদ্দ দেয়ায় অনিয়মের অভিযোগ করে সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে বিবিসি।
সমসাময়িক প্রসঙ্গে বিবিসির ওই অনুষ্ঠান প্যানোরমায় বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর নির্বাচিত মেয়র কর্মকর্তাদের সুপারিশ নাকচ করে বাংলাদেশি ও সোমালি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে অনেক বেশি অনুদান দিয়েছেন, যাতে অন্যান্য সংগঠনকে অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রে তহবিল কমে গেছে।
এরপর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসকে নিয়োগ করে যুক্তরাজ্য সরকার।
২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত টাওয়ার হ্যামলেটসের যাবতীয় ব্যয় খতিয়ে দেখবে তারা।
এ বিষয়ে একটি নথি মহানগর পুলিশের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের এক মুখপাত্র জানান, নিরীক্ষকরা শুক্রবার কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “কাউন্সিলের সব কার্যক্রম যথাযথ হয়েছে তা প্রমাণের সুযোগ পাওয়ায় আমরা নিরীক্ষকদের স্বাগত জানাচ্ছি।”
“নিরীক্ষা এ বরোর জন্য বড় ধরনের একটি সুযোগ করে দিয়েছে এটা দেখানোর যে, এখানকার সব অধিবাসীর স্বার্থরক্ষায় তা কাজ করেছে।”
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এরিক পিকলস বলেন, “টাওয়ার হ্যামলেটসে বিভেদমূলক গোষ্ঠীগত রাজনীতির চর্চা এবং সরকারি তহবিল বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ রয়েছে।”
এ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিপত্র হাতে আসার পর জনস্বার্থে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নিরীক্ষায় টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষের অনুদান, সম্পদ স্থানান্তর, প্রচারকে মাথায় রেখে অর্থ ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
বিবিসি প্যানোরমায় বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র কর্মকর্তাদের সুপারিশ নাকচ করে বাংলাদেশি ও সোমালি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ১৫ লাখের পরিবর্তে ৩৬ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন। এতে অন্যান্য সংগঠনকে অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রে তহবিল কমে গেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
লুৎফরের প্রতিপক্ষ স্থানীয় লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টির কাউন্সিলরদের অভিযোগ, ২০১০ সালে নভেম্বরে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর নির্বাচনী সুবিধা নেয়ার জন্যই দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তবে যুক্তরাজ্যের দৈনিক টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে লুৎফর রহমান বলেন, “জাতিগত বিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েই আমার বিরুদ্ধে এসব বলা হচ্ছে।”
একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০১০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর মেয়র নির্বাচিত হন লুৎফর রহমান, যিনি আগে লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এ পৌরসভার ৫১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২৬ জন লেবার পার্টির, ১৪ জন স্বতন্ত্র, সাতজন কনজারভেটিভ এবং দুইজন সম্মানিত কাউন্সিলর রয়েছেন।