কয়লা উত্তোলনে কৃষিজমি রক্ষা করার ওপর জোর দিয়ে প্রয়োজনে ‘নতুন প্রযুক্তি’ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 06 Feb 2014, 03:19 PM
প্রায় আড়াই বছর পর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা অফিস করে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন বলে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান।
তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়লা উত্তোলনে আরো নতুন প্রযুক্তি হয়তো এই সময়ের মধ্যে চলে আসতে পারে। এই মুহূর্তে কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে নতুন প্রযুক্তির জন্য অপেক্ষা করব।”
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে আমদানির পাশাপাশি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হবে কিনা- সে বিতর্কের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর এই দিক নির্দেশনা এলো।
অবশ্য উন্মুক্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে কোনো বক্তব্য দেননি। ‘নতুন প্রযুক্তি’ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষার ক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবয়িত হবে- সে বিষয়েও কিছু বলেননি।
সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে পৌঁছালে তার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ সেরে প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে যান বেলা সোয়া ২টার দিকে।
পরে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষেপে সাংবাদিকদের জানান নসরুল হামিদ বিপু।
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর মন্ত্রণালয়ের সামনে কোন কোন চ্যালেঞ্জ আছে এবং সেগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কৃষকদের জমি আগে রক্ষা করতে হবে। এরপরে সিদ্ধান্ত নেব আমরা কী করতে চাই। কয়লা উত্তোলন ভবিষ্যতের উপর ছেড়ে দিতে চাই’।”
বিপু বলেন, কয়লা উত্তোলন নিয়ে গবেষণা বাড়ানোর বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
দেশে পাঁচটি কয়লা খনি থাকলেও ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে শুধু একটি খনি থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার টনের মতো কয়লা উৎপাদন হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার হিসাবে, পাঁচটি খনিতে ৩১০ কোটি টনের মতো কয়লা মজুদ রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ, বিভিন্ন বাম সংগঠন ও পরিবেশবাদীদের রয়েছে প্রবল বিরোধিতা। বিতর্ক থামিয়ে কয়লা কিভাবে তোলা হবে তা নিয়ে গত দেড় দশকেও একটি কয়লা নীতি করতে পারেনি সরকার।
প্রতিমন্ত্রী জানান, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে করণীয় নির্ধারণ এবং সম্ভাব্য যেসব প্রকল্প হাতে আছে সেগুলোর বিষয়ে এ বছরের মধ্যেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর নির্দশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের বিদ্যুতের প্রায় ৭৫ শতাংশই আসে গ্যাস থেকে। আর উৎপাদিত মোট গ্যাসের ৭২ শতাংশই চলে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বর্তমানে মোট বিদ্যুতের ৩ শতাংশেরও কম আসছে কয়লা থেকে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার হাতিরঝিলে ‘আলোক উৎসব’ এর আয়োজন করা হয়।
অবশ্য গত বছরের জুন মাসে সংসদে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪০ ভাগ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, পায়রা বন্দরের কাছে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিপু বলেন, “১৮ বিলিয়ন ডলারের মতো রিজার্ভ, সেটা ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো হতে যাচ্ছে। নিজেদের অর্থে নির্ভর করে প্রকল্পগুলোকে কীভাবে স্বংয়সম্পূর্ণ করতে পারি, বিদেশের অর্থের অপেক্ষায় না থেকে নিজেদের অর্থে কীভাবে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করতে পারি সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী বলেন, “গত পাঁচ বছরে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। জোট সরকারের আমলে পিছনে চলে যাওয়া এই খাতকে বর্তমানের অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।”
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার অর্ধেক আসবে কয়লা থেকে।
উপদেষ্টা বলেন, “নতুন সরকারের ভিশন ভুলে না গিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।”
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছেন কর্মকর্তারা।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার ২৪ দিনের মাথায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে এই প্রথম দিন অফিস করলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত পাঁচ বছরে তিনবার তিনি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেছেন। এর আগে সব শেষ ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট তিনি এ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন।