যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন টিমের সমন্বয়ক বলেন, “আইন অনুসারে সরকারের সিদ্ধান্তে এই রায় বাস্তবায়ন হবে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার চাইলে জেল কোড অনুসরণ করতে পারে।
“তবে জেল কোড অনুসরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার চাইলে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্তও নিতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা বাস্তবায়নের বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় একথা বলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
তবে জামায়াত নেতার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কারাবিধি অনুসরণের বিকল্প নেই। রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি; যদিও প্রসিকিউটররা বলছেন, এর কোনো সুযোগ নেই।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, দ্রুত এই রায় বাস্তবায়ন করা হবে।
এই বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা শফিক আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “রায় এখনো ট্রাইব্যুনালে যায়নি। রায় সেখানে যাওয়ার পর প্রসিকিউশন টিমের পরামর্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
কাদের মোল্লা গাজীপুরের কাশিমপুরর কারাগারে ছিলেন, রায়ের পর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। এখন পর্যন্ত কারাবিধি অনুসরণ করেই এই রায় কার্যকরের বলছে কারা কর্তৃপক্ষ।
উপ-কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ের অনুলিপি আমরা এখনো হাতে পাইনি। হাতে পেলে জেল কোড অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়মটা হচ্ছে, আমরা যতটুক জানি, এতে রিভিউর সুযোগ নাই।
“যাই হোক এ মামলায় রিভিউ বা ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ আছে কি না- সে বিষয়ে রোববার আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে যোগাযোগ করব। যদি সেই সুযোগ না থাকে, তাহলে রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের (২১ দিনের আগে নয়, ২৮ দিনের পরে নয়) মধ্যে এটা কার্যকর হয়ে যাবে।”
কবে থেকে এই দিন গণনা শুরু হবে-এ প্রশ্নের জবাবে কারারক্ষক মাহবুব বলেন, “যেদিন রায়ের অনুলিপি পাব সেদিন থেকেই। কালকে পেলে কাল থেকেই গণনা হবে।”
সাধারণ মামলা সম্পর্কে কারাবিধিতে বলা হয়েছে, স্পেশাল লিভ পিটিশন (চূড়ান্ত আপিল) খারিজের সংবাদ পাবার সঙ্গে সঙ্গে সরকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেল সুপারকে টেলিগ্রামের মাধ্যমে তা জানাবেন। এরপর জেল সুপার ২১ দিনের পূর্বে নয় এবং ২৮ দিনের পরে নয়-এমন সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষমতা পাবেন।
সাধারণ মামলায় বিচারিক আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে দণ্ডাদেশ কার্যকরের জন্য জন্য হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। এক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিলের সুযোগও রয়েছে।
তবে আপিল না করলেও ওই দণ্ড কার্যকরে হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। হাই কোর্টে নিষ্পত্তির পর আসামি আপিল বিভাগে লিভ পিটিশন দায়ের করতে পারেন।
তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালই হাই কোর্টের সমমর্যাদা সম্পন্ন। ওই আইন অনুসারে ট্রাইব্যুনালের যে কোনো দণ্ডের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষ আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।
সাধারণ ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে আবেদন না করলে হাই কোর্ট মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অনুমোদন দেয়ার পর মৃত্যুদণ্ডের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
চূড়ান্ত নিষ্পত্তির রায় এক্ষেত্রে আদালতের আদেশ বিচারিক আদালতে পৌছার পর ওই আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে।
কারা বিধিতে বলা আছে, প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করার অধিকার থাকবে। যার সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও একমত পোষণ করেছিলেন।
কারা বিধি অনুসারে কোনো মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর জেল সুপার তা বন্দিকে জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে তার মত চাইবেন। ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আসামির সর্বোচ্চ সময় সাতদিন।
ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনে রাষ্ট্রপতি ও সরকার উভয়কে সম্বোধন করতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর জেল সুপার তা স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পাঠাবেন। সঙ্গে পৃথক পত্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সম্ভাব্য তারিখ এবং আসামির দণ্ডের বিষয়ও থাকবে।
জেল সুপারকে এর জবাব দেয়ার সর্বনিম্ন সময়সীমা কারা বিধিতে নেই। তবে সর্বোচ্চ ১৫ দিনেও তিনি জবাব না পেলে এ বিষয়ে আবারো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। তবে সরকারের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।