বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষকরা তদন্ত করে যাওয়ার ছয় মাস পর সেই প্রতিবেদন হাতে পেলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যার প্রতিক্রিয়ায় বরাবরের মতোই তিনি বলেছেন, এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
Published : 11 Jun 2013, 09:17 AM
বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি ইয়োহানেস সুট মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ওই প্রতিবেদন তুলে দেন।
মন্ত্রী জানান, দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ রেখেছেন বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষকরা।
তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি অর্থমন্ত্রী।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “আই ডোন্ট নো।”
এ বিষয়ে সংসদে বক্তব্য দেবেন বলে জানান তিনি।
মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখনো বলছি, পদ্মায় কোনো চুরি টুরি হয়নি। হওয়ার চান্সও নেই। তারা (বিশ্ব ব্যাংক) বলেছে, দুর্নীতি হতে পারত। আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি।”
দুর্নীতির ষড়যন্ত্রও দুর্নীতি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “তার জন্য কেইস চলছে। পানিশমেন্টও হতে পারে। তবে আমি জানি না। সাক্ষীর ওপর নির্ভর করবে।”
অর্থমন্ত্রীর আগে বিশ্ব ব্যাংকের নতুন আবাসিক প্রতিনিধি পদ্মা প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন না নিতে বাংলাদেশ সরকার চিঠি দিয়েছে। কাজেই বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না।
বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে কী না জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধি বলেন, “এ প্রশ্নের উত্তর সরকার দিতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব বাজেট আছে। দাতাদের সহায়তা, আন্তর্জাতিক ঋণ ও সার্বভৌম বন্ড- সবকিছু মিলিয়ে পদ্মা প্রকল্পের জন্য যথেষ্ট তহবিল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পাওয়া সম্ভব। আমি মনে করি এটা সম্ভব।”
২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। তবে প্রকল্পের পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠায় সেই চুক্তি ঝুলে যায়।
গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফা সফরে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন পর্যবেক্ষকরা।
ওই বৈঠকের পর দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন, দুর্নীতির ‘ষড়যন্ত্র’ যে হয়েছিল, সে বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ও দুদক ‘একমত’ হলেও কার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে- সে বিষয়ে মতৈক্য হয়নি।
শেষ পর্যন্ত মতৈক্য ছাড়াই ঢাকা ছাড়েন বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক ওকাম্পো ও তার সঙ্গীরা।
তাদের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগেই দীর্ঘ টানাপড়েনের অবসানে চলতি বছর জানুয়ারিতে সরকার বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়।
সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দুদকের করা একটি মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন। সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাতজনকে আসামি করে দায়ের ওই মামলায় সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন বা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর নাম এলেও তাদের আসামি করা হয়নি।
বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছেনে অর্থমন্ত্রী মুহিত।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে আগামী ৩০ জুন ৯ হাজার ১৭২ কোটি টাকার দরপত্র ডাকা হবে।