ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় রোববার ঢাকা আসছেন।
Published : 02 Mar 2013, 04:24 PM
বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে তার বিদেশ সফরের সূচনা হতে যাচ্ছে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচালে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের মধ্যে প্রণব মুখোপাধ্যয়ের আগমণ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্ততি নেয়া হয়েছে।
সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শ্রভ্রা মুখোপাধ্যায়ও রয়েছেন, নড়াইলে জন্ম ও এর আলোবাতাসে বেড়ে উঠেছেন যিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাবেন বলে তার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাজ্জাদ হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় গত অগাস্টে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়ার এই প্রথম বিদেশ সফর করছেন।
তিনদিনের এই সফরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। তার এই সফরে দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে ভারতের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অগ্রগতি হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
নয়া দিল্লিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই বলেন, “রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের নেতৃত্বের কাছে দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যেতে ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতির বার্তা নিয়ে যাবেন।”
তার এ সফর এমন একটি সময়ে হচ্ছে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর রায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সহিংস কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। রোব ও সোমবার হরতালেরও ডাক দিয়েছে তারা। আর তাদের হরতাল শেষে মঙ্গলবার হরতাল ডেকেছে তাদের জোটসঙ্গী বিএনপি।
অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তার এই সফরে কোনো রাজনৈতিক আলোচনায় সম্পৃক্ত হবেন না।
রঞ্জন মাথাই বলেন, রাষ্ট্রপতির এই সফর নিয়ে তারা সব সময় ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
সফরকালে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে দেয়া হবে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব ল’ ডিগ্রি।
সোমবার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতে তার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা গ্রহণ করবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, স্পিকার আব্দুল হামিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
প্রণব মুখোপাধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তার যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভারতের রেলওয়ে প্রতিমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়সহ পার্লামেন্টের চার জন সদস্য আসছেন।
রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসেবে মুকুল রায়ের ঢাকা আসায় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এ চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
রাষ্ট্রপতির এই সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার সুযোগ এনে দেবে মন্তব্য করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, রাষ্ট্রপতির প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেয়ার বিষয়টি এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় ভারত এবং দেশটির সঙ্গে একটি গভীর ও শক্তিশালী অংশীদারিত্ব চায়।
সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে ভরত থেকে সরবরাহ করা ট্যাংক ওয়াগন ও লোকোমোটিভ দিয়ে তৈরি মালগাড়ির উদ্বোধন করবেন।
তিনদিনের এই সফরে প্রণব মুখোপাধ্যায় কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠি বাড়ি এবং নিজের শ্বশুরবাড়ি নড়াইলের ভদ্রবিলে যাবেন। মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়ার আগে মির্জাপুরে কুমুদিনি কল্যাণ ট্রাস্টও পরিদর্শন করবেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির সফরের আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই ঢাকা সফর করেন।