চট্টগ্রামে জুমার নামাজের পর শাহবাগের ‘গণজাগরণ মঞ্চবিরোধী’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করে সাংবাদিক, গণমঞ্চ ও প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়েছে কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের কর্মীরা।
Published : 22 Feb 2013, 07:51 AM
এ ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা জামালখান রোডে দিগন্ত টিভি চ্যানেল ও দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
শুক্রবার দুপুরে নামাজের পর নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে ‘গণজাগরণ মঞ্চবিরোধী’ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় চিত্র ধারণ করতে গেলে বিক্ষোভকারীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এরপরই মিছিলকারীরা আন্দরকিল্লা মোড় থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় হয়ে জামালখান প্রেসক্লাব আসে। সেখানে শাহবাগের গণজাগরণ আন্দোলনের সংহতি গণমঞ্চে ভাংচুর ও হামলা চালায় বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম।
তিনি বলেন, মিছিলকারীরা গণমঞ্চে থাকা ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এবং সেখানে থাকা বিভিন্ন ব্যানার জড়ো করে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে তারা প্রেসক্লাবের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে সেখানকার কাচ ভেঙ্গে যায় বলে জানান ওসি।
চেরাগী পাহাড় মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। দফায় দফায় হামলায় দুই পুলিশ ও ১০ সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানান ওসি।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসীন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হামলায় দোতলার ভিআইপি লাউঞ্জের বেশকিছু কাচ ভেঙ্গে গেছে। প্রেসক্লাবের ভিতরে থাকা দুটি মোটসাইকেলের ক্ষতি হয়। নিচে বইয়ের দোকান বাতিঘরও ভাংচুর করে মিছিলকারীরা।
তিনি জানান, মিছিলকারীরা জামালখান রোডে এসে প্রেসক্লাবে ইট-পাটকেল ও লোহার রড নিক্ষেপ করতে থাকে।
সাংবাদিকদের উপর হামলা ও প্রেসক্লাবে ভাংচুরের প্রতিবাদে তাক্ষণিকভাবে জামালখান রোডে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের উদোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে জানান মহসীন চৌধুরী।
আন্দরকিল্লা মোড়ে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি তাবারুল হক বলেন, হামলায় যুগান্তরের আলোকচিত্রী রাজেশ চক্রবর্তী, ইনকিলাবের আলোকচিত্রী কুতুব উদ্দিন, মাছরাঙার ক্যামেরাম্যান রবিউল টিপু, এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান ফরিদ উদ্দিন ও এটিএন নিউজ এর ক্যামেরাম্যান অমিত দাশ আহত হন।
তাদের মধ্যে ইনকিলাবের কুতুব উদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার ক্যামেরাও রেখে দিয়েছে হামলাকারীরা।
তাবারুল জানান, জুমার নামাজের পরপরই আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি আন্দরকিল্লা মোড়ে আসার পরপরই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সাংবাদিকরা সেখান থেকে সরে যান।
হামলার পর পুলিশি বেস্টনির মধ্যে বিক্ষোভকারীরা আন্দরকিল্লা মোড়ে সমাবেশ শুরু করে বলে তাবারুল জানান।
জনতার প্রতিরোধ
সাংবাদিক, গণমঞ্চ ও প্রেসবক্লাবে হামলার প্রতিবাদে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়শ’ বিক্ষুদ্ধ জনতা সংগঠিত হয়ে জামালখান রোডে মিছিল করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় তারা জামালখান রোডের সানমার স্প্রিং গার্ডেনের তৃতীয় তলায় দিগন্ত টিভির ব্যুরো কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে কার্যালয়টির কয়েকটি জানালা ও দরজার কাঁচ ভেঙ্গে যায়।
বিক্ষুদ্ধ জনতা এ সময় ভবনটির সামনে টায়ার জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভবনের নিচে থাকা দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশনা সংস্থা ‘প্রথমা’র কার্যালয়ও ভাংচুর হয়।
পরে বিক্ষোভকারীরা এর পাশের ভবনে অবস্থিত দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো কার্যালয়েও ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাংচুর করে। সেখানেও রাস্তায় আগুন দেয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ জনতা নগরীর লাভ লেইন মোড়ে অবস্থিত আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম কার্যালয়ও ভাংচুর করে। পত্রিকাটির চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ জাহিদুল করিম কঁচি দাবি করেন, তাদের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর ছাড়াও তিনটি ল্যাপটপ ও বিজ্ঞাপনের টাকা লুট করা হয়।
এছাড়া জামালখানে অবস্থিত ‘কেয়ারি ডেভেলপমেন্ট’ এর একটি নির্মাণাধীন ভবনের কাঁচ ভাংচুর করে জনতা।
সাংবাদিকদের বিক্ষোভ-সমাবেশ শনিবার
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও আন্দরকিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকাল এগারটায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সাংবাদিকরা।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব যৌথভাবে এ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়।
দুপুরে জুমআর নামাজের পর আন্দরকিল্লায় শাহী জামে মসজিদের সামনে সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের সময় পাঁচ সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায় কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের কর্মীরা।
পরে তারা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা চালায়।
এদিকে ওই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন,চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সংগঠন।