পুলিশ সদস্যরা অপরাধ-অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে অভিযোগ তুলে এই বাহিনীকে আরও বেশি জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি সংসদে তুলেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা।
Published : 13 Jun 2022, 09:55 PM
সোমবার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা এ দাবি তোলেন।
জবাবে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তবে তিনিও স্বীকার করেন, “পুলিশে কেউ খারাপ নেই, এটা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না।”
এদিন সম্পূরক বাজেটে জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য ১৭৮ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। এই বরাদ্দ ছাঁটাই করার দাবি জানান ১০ জন সংসদ সদস্য।
সম্পূরক বাজেটের আলোচনায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু পুলিশ বাহিনীর ভেতরের দুর্নীতিবাজদের ‘অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে’ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, “পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িত হওয়ার যে প্রবণতা বেড়ে গেছে। এর কারণ, যেসব পুলিশ অপরাধ করছে তার শাস্তি হচ্ছে না। এ কারণে গোটা পুলিশ বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।”
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, “এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী নয়, পুলিশ পরিণত হয়েছে দলীয় বাহিনীতে। পুলিশের কাছে নতুন সমস্যায় পড়তে হয় কি না, এই আশঙ্কায় মহাবিপদে পড়লেও পুলিশের কাছে মানুষ যেতে চায় না।
“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম তো করেই। হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এর প্রতিকার চাইতে গেলেও নেমে আসে নির্যাতন।”
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আজকে পুলিশের কেউ অন্যায় করলে মানবাধিকার কমিশন নিশ্চুপ থাকে। কোনো পুলিশ অন্যায় করলে সব পুলিশ একত্রিত হয়ে তাকে সাপোর্ট করে। এতে করে জুডিশিয়ারি অসহায় হয়ে যায়। জনগণের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, কিন্তু তাদের যাওয়ার জায়গা নেই।
“পুলিশকে বুঝতে হবে, ‘পি ফর পোলাইট’। আমাদের পুলিশ অনেকক্ষেত্রে জনগণকে তাদের চাকর মনে করেন। পুলিশের দায়বদ্ধতা প্রয়োজন। পুলিশ মনে করে অস্ত্র তার হাতে, তার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তারা সীমাহীন ক্ষমতার মালিক।”
তিনি সংসদে মানবাধিকার বিষয়ক সর্বদলীয় বিশেষ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করেন। বলেন, “এই মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি জনগণের যে কোনো অভিযোগ এলে তা তদন্ত করবে এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে।”
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও সাক্ষী হয়, এতে প্রমাণ করে দেশের বিচার ব্যবস্থার অবস্থা কতটা নাজুক। সরকারি দল চায় পুলিশ তাদের কথামতো চলবে। এই ধারা থেকে আমরা বের হয়ে না আসতে পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিতে পারব না।”
তিনি বলেন, “র্যাবের ডিজির সফর উপলক্ষে নিরাপত্তার নামে সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেইট পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখান থেকে কোন শিক্ষার্থীদের বের হতে দেওয়া হয়নি। আমি পরিচয় দিয়ে চারটি ব্যারিকেড পার হই।
“পুলিশ বহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমের অভিযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। ক্ষমতায় থাকার জন্য পুলিশ বাহিনীকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”
হারুন বলেন, “নির্বাচন কমিশন নামে যে প্রতিষ্ঠানটি আছে, তা বিলুপ্ত করে দেন। এটাকে পুলিশ বাহিনীর হাতে ন্যস্ত করে দেন। কী প্রয়োজন, খামাখা! প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১, এই পর্যন্ত যতদিন থাকবেন, সেই পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দরকার নেই।
“পুলিশের আইজিপিকে প্রধান করে দেন। তাদের অধীনে নির্বাচন দেন। আইন করেন সংসদে। সেইভাবে নির্বাচন হবে।”
আইনকে সরকার নিজেদের করায়ত্ত রাখতে চায়- সাবেক আইজিপি কে এম শহীদুল হকের এমন মন্তব্য তুলে ধরে বিএনপির আরেক নেতা মোশারফ হোসেন বলেন, “সাবেক হলেই বলে, কিন্তু বর্তমান থাকতে কেন বলে না? যেমন দেখলাম সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে, যিনি নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এই ফ্রুটিকাটি যদি আগেই খেত, আরও ভালো করেই বলতে পারত।”
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু ভালো কাজ করছে। কিছু খারাপ কাজও করছে। এই খারাপগুলোকে শুধরানো দরকার।”
এসব অভিযোগের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদকে বলেন, “পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেটা উনারাই প্রমাণ করেছেন, এটা নেহায়েত রাজনৈতিক বক্তব্য। পুলিশের কাজ দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। বর্তমান সরকারের অধীনে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।”
মোজাম্মেল হক বলেছেন, “পুলিশে কেউ খারাপ নেই, এটা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। কিন্তু দেখতে হবে যারা অন্যায় করছে তাদের সরকার বরদাশত করছে কিনা। যদি কারও ক্ষেত্রে অন্যায়-অনিয়মের সত্যতা প্রমাণ হয়, সরকার তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
“আপনারা জানেন অনিয়মের কারণে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার চাকরি হারাচ্ছে। অনেকে বাড়বাড়ির কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। শাস্তি পেয়েছে।”
হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ হচ্ছে, যার একটিতেও কোনো ধরনের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ নেই বলেও মন্ত্রী দাবি করেন।