স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের উন্নয়নের বিশ্বস্ত বন্ধু জাপানকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য পূরণেও পাশে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা।
Published : 16 Mar 2022, 09:58 PM
বুধবার ‘বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর: পরবর্তী উন্নয়নে অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।
বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরও দুদেশের সম্পর্ক এখন উষ্ণতম অবস্থানে বিরাজ করছে বলে মনে করেন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ও বাংলাদেশে জাইকার প্রধান ইউহো হায়কাওয়াসহ দেশটির কয়েকজন প্রতিনিধি।
রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় তারা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরের ধাপে নিয়ে যেতে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও সহজীকরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরীক্ষিত বন্ধু জাপানের সহযোগিতা থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
“স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পর আমাদের রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমরা জাপানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে চাই। আশা করি দুপক্ষের মধ্যে উইন উইন পরিস্থিতি বজায় রেখে এই চুক্তি সম্পাদন হবে।”
তিনি ব্যবসা সহজীকরণের বিষয়ে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সহজীকরণের জন্য সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন উপরের স্তরে তেমন সমস্যা নেই। কিছুটা সমস্যা এখন থাকলেও তা রয়েছে ডেস্ক পর্যায়ে।
এসময় মন্ত্রী দুর্নীতিকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, এখনও কিছু মানুষ ক্যান্সারের সঙ্গে থাকতে চায়। তবে সরকার পর্যায়ক্রমে সকল ধরনের দুর্নীতি ও ব্যবসা সহজীকরণে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, জাপান-বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাধীনতারও আগে। তৎকালীন দেশ পাকিস্তান হলেও জাপানের সঙ্গে বাংলা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা সম্পর্ক ছিল। জাপান সবসময় বাংলা ভাষা ও বাঙালীকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে।
বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জাপান প্রথম দিকেই ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরে দুই দেশের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় আসীন হয়। ওই সফরই দুই দেশের সম্পর্কের ল্যান্ড মার্ক।”
তিনি জানান, ওই বছরই জাপান সরকার বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে যমুনা সেতু তৈরির জন্য সমীক্ষা করেছিল। কিন্তু পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে সেই সেতু আর করা হয়ে উঠেনি।
বঙ্গবন্ধু সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য বলেন, জাপানের সহযোগিতা নিয়ে ভিয়েতনাম আজকে উন্নয়নের বিস্ময়। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এমনকি চীনকেও জাপান ব্যাপক সহযোগিতা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকে এখনও সেই পর্যায়ের সহযোগিতা দেওয়া বাকি রয়েছে জাপানের।
দেশটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে সেই পর্যায়ের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সহযোগিতা শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “আমরা মনে করি বাংলাদেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় দুই চ্যালেঞ্জে হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা এবং কোভিড-১৯।
“এ দুই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন কিছুটা হলেও গতি হারিয়েছে।”
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ টানার জন্য অবশ্যই বিনিয়োগ সহজীকরণ করতে হবে। এছাড়াও আমদানি রপ্তানি পর্যায়ে কাস্টম বিভাগে সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় কোনও সমস্যা নেই। তবে কিছু ছোট সমস্যা আছে। তার একটি হচ্ছে দুর্নীতি। বিশেষ করে আমদানি পণ্য খালাসে কাস্টমসের দুর্নীতি।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ সহজীকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়াসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়।