শরীফের বিষয়ে ১০ আইনজীবীর চিঠি: আদালত বলল রিট করতে

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় আদেশের আবেদন জানানো ১০ আইনজীবীকে সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে রিট আবেদনের পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2022, 12:30 PM
Updated : 22 Feb 2022, 12:30 PM

মঙ্গলবার ওই আইনজীবীদের দেওয়া চিঠির বিষয়টি নজরে আনা হলে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এই পরামর্শ দেয়।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী দুদকের চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফের অপসারণের ঘটনায় এই বেঞ্চে চিঠি দেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের আইন কর্মকর্তাকেও ওই চিঠি দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া আইনজীবীদের মধ্যে মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন। এসময় চিঠিটি পেয়েছেন বলে জানান বেঞ্চের দুই বিচারপতি।

পরে আদালতের দেওয়া পরামর্শে বলা হয়, “এ বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হলে রিট আবেদন নিয়ে আসতে পারেন।”

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  শিশির বলেন, “এখন আমরা নিয়মিত আবেদন নিয়ে আদালতে যাব, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামীকালই তা আদালতে উপস্থাপন করা হবে।”

শরীফ উদ্দিনের অপসারণ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, প্রতিবেদন যুক্ত করে চিঠিতে বলা হয়, “প্রতিবেদনগুলো পড়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং একই সঙ্গে তা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট।

“এ ধরনের ঘটনা বর্তমান সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পথে অন্তরায়। দুর্নীতি প্রতিরোধে গৃহীত বহুমুখী পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়বে। দুর্নীতি রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভীতিকর পরিবেশে থাকবেন এবং আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত হবেন।”

সুপ্রিম কোর্ট (হাই কোর্ট) রুলস ১৯৭২ এর ১১(ক) অধ্যায়ের ১০ বিধি অনুযায়ী ওই চিঠি দেওয়া হয়। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ওই চিঠিটি আবেদন হিসেবে গ্রহণ করার আরজি জানানো হয়েছিল।

চিঠিতে নাম থাকা বাকি আইনজীবীরা হলেন- রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আব্দুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নওয়াব আলী।

গত বুধবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর স্বাক্ষর করা এক প্রজ্ঞাপনে কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের আদেশে জারি হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮- এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো।

“তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। যা ১৬ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্ন থেকে কার্যকর গণ্য হবে।”

পরের দিন বৃহস্পতিবার এই আদেশ প্রত্যাহার ও ৫৪(২) বিধি বাতিলের দাবিতে দুদক সচিবকে স্মারকলিপি দেন কমিশনের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ সংস্থাটির অন্যান্য দপ্তরে মানববন্ধন হয়।

পরে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে শরীফ উদ্দিনকে ‘শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে’ বিধি মোতাবেক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে দাবি করেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, “ওই কর্মকর্তার (শরীফ) বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট’ বহু অভিযোগ থাকায় তাকে অপসারণ করতে হয়েছে।”

এছাড়া শরীফের বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলা বহির্ভূত’ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও দপ্তর থেকে আসা নানা অভিযোগও তুলে ধরেন দুদক সচিব।

তবে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছিল তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেসবের তদন্ত ছাড়াই তাকে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছেন শরীফ।

দুদকের চাকরিচ্যুত এই কর্মকর্তা দাবি করেন, “অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ‘আপস’ করলে এতকিছু ‘হত না’।”

আরও পড়ুন