পনের কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সপ্তাহে ৩২২ জনের নাম সংগ্রহের পর পরের সপ্তাহে সেই তালিকা ২০ জনে নামিয়ে এনেছিল সার্চ কমিটি।
Published : 20 Feb 2022, 06:13 PM
তার একদিনের মধ্যে ২০ জনের সেই তালিকাও ছোট করে ১২/১৩ জনে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
তিনি বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার এই তালিকা ১০ জনে নামিয়ে এনে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হবে।
সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত এই ১০ জন থেকে অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, যে কমিশনের পরিচালনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
এবার ইসি গঠনের আগে আইন প্রণয়নের পর রাষ্ট্রপতি গত ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দেন।
পরদিন কাজ শুরুর পর এই কমিটি নিজেদের মধ্যে পাঁচ দফা বৈঠক করে, আর বিশিষ্টজনদের নিয়ে বসে তিন দফা।
এরমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে ৩২২ জনের নাম সংগ্রহ করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই তালিকা প্রকাশ করে এই কমিটি।
শনিবার বসে সেই তালিকা ২০ জনে নামিয়ে আনার পর রোববার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ফের বৈঠকে বসেন কমিটির সদস্যরা।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিচারপতি হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের সভায় আমরা ১০টি নাম এখনও চূড়ান্ত করতে পারিনি; কাছাকাছি এসেছি। ১২/১৩টি নামের মধ্যেই এ ১০ জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আশা করি ১০টি নাম পেয়ে যাব।”
মঙ্গলবার বৈঠক করে নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
“২২ ফেব্রুয়ারি আমরা সর্বশেষ মিটিং করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম পাঠিয়ে দিতে পারব। আইন অনুযায়ী আমাদের ১৫ কার্যদিবস রয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ২৭ ফেব্রুয়ারি সময় রয়েছে; তার আগেই ২৪ তারিখের মধ্যে নাম পাঠিয়ে দেব।”
চূড়ান্ত প্রস্তাবে থাকা ১০ জনের নাম প্রকাশের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি হাসান বলেন, “১০ জনের নাম আমরা প্রকাশ করব না।
“এটা রাষ্ট্রপতির ডোমেইন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে দিলে পরে তিনি যদি বলেন আপনারা প্রকাশ করেন, তাহলে আমরা প্রকাশ করব। এটা তার সম্পত্তি, তার কাছেই দিতে হবে। আমাদের প্রকাশ করার কোনো আইন নাই।”
কমিটির পঞ্চম সভায় তিন শতাধিক প্রস্তাবিত নাম থেকে যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা হয়। রোববার ষষ্ঠ বৈঠকে ওই তালিকা আরও ছোট করে আনা হয়।
বিচারপতি হাসান বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত ছয়টি মিটিং করেছি, চারটি মিটিং করেছি সুশীল সমাজ, পেশাজীবীদের প্রতিনিধির সঙ্গে। প্রথমে ৩২২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এ তালিকার সঙ্গে সাংবাদিকদের বৈঠকে আরও কিছু নাম দিয়ে গেছে। নাম দেওয়ার সময় একদিন বাড়িয়েছিলাম। এরপরও বলেছিলাম-কোনো সংগঠন নাম পাঠান তবে তাদের নামও কনসিডারে নেব।
“সময় বাড়ানোর পর দুটি সংগঠন নাম পাঠিয়েছিল। সব নামের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে কমিটির পঞ্চম সভায় (শনিবার) ২০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।”
প্রস্তাবিত নামের বাইরে সার্চ কমিটি নিজেরা কোনো নাম যুক্ত করছে না বলে জানান তিনি।
“আমাদের সেটার এখতিয়ার আছে, কিন্তু আমরা সেটা করতে চাই না।”আইনের মধ্যে থেকে স্বচ্ছভাবে কাজ করে এই সুপারিশ চূড়ান্ত করছেন বলে জানান সার্চ কমিটির সভাপতি।
এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন।
আইনে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে সার্চ কমিটি। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি পদের জন্য দুইজন এবং নির্বাচন কমিশনারের চারটি পদের জন্য আটজনের নাম তারা প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তার তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর হতে হবে; কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় পদে অন্তত ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
অনুসন্ধান ক্রম ২০ ডিসেম্বর: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু, যা চলে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৩২টি দল ছিল আমন্ত্রিত, অংশ নেয় ২৫টি। ২৭ জানুয়ারি: ইসি নিয়োগের আইন সংসদে পাস। ৫ ফেব্রুয়ারি: ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন। ৬ ফেব্রুয়ারি: সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক। ৮ ফেব্রুয়ারি: সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক। নিবন্ধিত দল, সংগঠন ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নাম সংগ্রহ। ১১ ফেব্রুয়ারি: বিশিষ্টজনের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক সার্চ কমিটির। ১২ ফেব্রুয়ারি: বিশিষ্ট জনদের আরেকটি দলের সঙ্গে সার্চ কমিটির বৈঠক। ১৩ ফেব্রুয়ারি: যারা নাম জমা দেয়নি, তাদের জন্য সময় বাড়ানোর ঘোষণা। ১৪ ফেব্রুয়ারি: কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির বিদায়। ইসিতে নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি: কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে সার্চ কমিটির বৈঠক। ১৬ ফেব্রুয়ারি: সার্চ কমিটির সভায় তিন শতাধিক নাম যাচাই-বাছাই। ১৯ ফেব্রুয়ারি: সার্চ কমিটির পঞ্চম সভায় তালিকা ২০ জনের মধ্যে নামিয়ে আনা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি: সার্চ কমিটির ষষ্ঠ সভায় ১২/১৩ জনের নামের তালিকা। |