রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত ১০ জনের নাম জমার আগে প্রস্তাবিতদের সম্মতি নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সার্চ কমিটিকে।
Published : 15 Feb 2022, 09:09 PM
মঙ্গলবার সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর আগে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তিন বৈঠকে আমন্ত্রিত হলেও উপস্থিত হতে পারেননি, এমন ব্যক্তিদের এদিনের বৈঠকে ডাকা হয়।
তাতে যোগ দেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ ও চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে তাদের চারজনের সঙ্গে বৈঠক করেন সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ছয় সদস্য।
এর আগে তিনটি বৈঠকে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির মতামত নেয় সার্চ কমিটি। সেই সঙ্গে নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নামের প্রস্তাবও নেওয়া হয়। বাইরে থেকেও নামের প্রস্তাব নেয় সার্চ কমিটি। তাতে ৩২২টি নাম পাওয়ার কথা সোমবারই জানানো হয়েছিল।
মঙ্গলবারে বৈঠক থেকে বেরিয়ে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “যোগ্যতার বিবেচনার নিরিখে একজন নারী ও একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকা উচিৎ (ইসিতে)। বিশেষ পেশার প্রাধান্য না দিয়ে সব পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে ভারসাম্যমূলক প্রতিনিধিত্ব রাখার জন্যে আমরা বলেছি।”
যাদের নামের প্রস্তাব এসেছে, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন তারা।
বুলবুল বলেন, “এরা সুবিধার জন্যে রাজনৈতিক বোল পাল্টিয়েছেন কিনা, আর্থিক কোনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিল কি না, এসব দেখা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন এমন যোগ্যতর প্রতিনিধিদের যেন রাখা হয়…যোগ্যতর মানুষ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভালো নির্বাচন করা সম্ভব।”
তিন শতাধিক প্রস্তাবিত ব্যক্তির নামের তালিকা প্রকাশ ঠিক হয়নি বলে মত দেন বুলবুল।
কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রকাশিত তালিকার মধ্যে অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা জানেনও না কে তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। তালিকায় নাম থাকায় খুশি হয়েছেন; কিন্তু কোনো কারণে চূড়ান্তভাবে তারা বিবেচিত না হন, তখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বেন। কারও মতামত না নিয়ে তাদের নাম তালিকায় প্রকাশ করা মনে হয় ঠিক হয়নি।”
বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, “আমরা বলেছি-গ্রহণযোগ্যতা একটি বড় বিষয়। সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, এমন নাম যেন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করেন, যাতে কোনো বিতর্ক না হয়। উনারা বলেছেন, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেরকম নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবেন।”
প্রস্তাবকদের নাম প্রকাশ না করার সুপারিশের পাশাপাশি সম্মতি নিয়ে চূড়ান্ত ১০ জনের নাম প্রকাশের পক্ষে মত দেন এই সাংবাদিকরা।
নঈম নিজাম বলেন, “আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের আগ্রহ বেশি, যারা প্রত্যাশা পূরণ করবেন, নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবেন, তাদের নাম জনসম্মুখে আসতেই পারে (চূড়ান্ত প্রস্তাবিত ১০ জন প্রকাশ)। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের কনসেন্ট নিতে হবে, এ বিষয়ে সার্চ কমিটিও একমত হয়েছে। সেই ১০ জনের নাম তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রকাশিত হোক।”
বুলবুলও যোগ করেন, “আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে-চূড়ান্ত বিবেচনায় যদি কারও নাম প্রকাশ করতে হয়, তাদের যেন মতামত নেওয়া হয়।”
‘দ্রুতই চূড়ান্ত করবে সার্চ কমিটি’
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাবিতদের নাম সংগ্রহ ও মতামত নেওয়া শেষে নির্ধারিত সময়েই তা চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে সার্চ কমিটি।
মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে সার্চ কমিটির সচিবের দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার সার্চ কমিটির সামনে সব নাম উপস্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, “সবার মতামত কমিটি বিবেচনা করছে। আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রস্তাবিত নামগুলো এডিট করে ফেলছি, আগামীকাল উনাদের (কমিটি) সামনে উপস্থাপন করা হবে। তারপর উনারা কার্যক্রম-পদ্ধতি ঠিক করে এখান থেকে একটা সিলেকশনের দিকে যাবে আরকি।”
রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার জন্য ১০ জনের নাম কবে চূড়ান্ত করা হবে জানতে চাইলে আনোয়ারুল বলেন, “কার্যক্রম-পদ্ধতি ঠিক করে এখান থেকে একটা সিলেকশনের দিকে যাবে … কমিটি কালকে থেকে ফরমাল মিটিং করবে, কীভাবে এটি ছোট করা যায়। তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলবে।”
প্রস্তাবিত নামের বাইরে আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন মনে করলে তা কমিটি পর্যালোচনা করবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
প্রস্তাবিতদের মধ্যে থেকে নাকি এর বাইরে থেকেও সুপারিশ করা হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সার্চ কমিটি তো সার্চ যেভাবে করার কথা সেভাবেই করবে। এটা আছে.. আর যদি মনে করে আরও সার্চ করার প্রয়োজন আছে সেটা উনারা দেখবেন।”
কবে নাগাদ সুপারিশ করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা তো কমিটি দেখবে.. ভেরি কুইকলি করে ফেলব ইনশাল্লাহ।”
নতুন করে আর কারও মতামত নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির পরবর্তী সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করার কথা।
ওই তালিকা থেকে অনধিক পাঁচজনকে বেছে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন। তাদের মধ্যে একজন হবেন সিইসি, বাকিরা নির্বাচন কমিশনার। আর তাদের উপরই থাকবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার।