সিনহার হত্যাকারীদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তিটাই’ চান শিপ্রা

কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করছেন অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে ‘ডকুমেন্টারি’ নির্মাণে সঙ্গে থাকা শিপ্রা দেবনাথ।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2022, 06:58 PM
Updated : 30 Jan 2022, 07:56 PM

আলোচিত এ মামলার রায়ের আগে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনে যা আছে, সেই অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তিটাই হবে- এটাই আমি চাইব।”

‘জাস্ট গো’ নামে ভ্রমণ বিষয়ক একটি ডকুমেন্টারি বানাতে সিনহার সঙ্গে কক্সবাজারের হিমছড়িতে গিয়েছিলেন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী শিপ্রা এবং তার সহপাঠী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর।

প্রায় একমাস কাজ করার পর ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা।

সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের করা এই হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রে নাম আসা ১৫ আসামির বিরুদ্ধে সোমবার রায় ঘোষণা করবে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

কিন্তু সিনহা হত্যা এবং তার পরের বিভিন্ন ঘটনায় কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে শিপ্রাদের। সিনহাকে হারানোর বেদনাও পিছু ছাড়ছে না তাদের।

রায় ঘোষণার আগে সেসব মনে করে শিপ্রা দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচারে যে কোনো কিছু হতে পারে। এখানে আমার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির আর কিছু নাই।”

‘জাস্ট গো’ টিমের চার সদস্য সিনহা মো. রাশেদ খান, শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও একজন বিদেশি।

সিনহাকে হত্যার রাতেই কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার কাছে নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে সে সময় কিছু মাদক পাওয়ার কথাও বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

পরদিন শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে রামু থানায় মাদক আইনে মামলা করে। আর সিনহার গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয় সিফাতের বিরুদ্ধে।

হত্যার ঘটনায় কক্সবাজারের পুলিশ সে সময় বলেছিল, রাশেদ তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।

পুলিশের দেওয়া বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগগুলো এসময় আলোচনায় আসতে থাকে।

শিপ্রা দেবনাথ

সিনহার বোন আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে অত্মসমর্পণ করেন।

তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। ওই ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশকে নতুন করে সাজানো হয়। এসপি থেকে কনস্টেবল- প্রায় সব পুলিশ সদস্যকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১০ অগাস্ট জামিনে মুক্তি পান শিপ্রা ও সিফাত। তখনই মামলা দুটির তদন্তভার র‌্যাবকে দেওয়া হয়।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেয় র‍্যাব। পাশাপাশি সিফাত ও শিপ্রার বিরুদ্ধে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে র‌্যাব জানায়, অভিযোগের কোনো সত্যতা তারা পায়নি।

শিপ্রা দেবনাথের সঙ্গে সিনহা মো. রাশেদ খানের পরিচয় ২০১৮ সালে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে গিয়ে। শিপ্রার ছিল ফিল্ম বানানোর নেশা আর সেনাবাহিনী থেকে যাওয়া সিনহার স্বপ্ন ছিল বিশ্বভ্রমণ। 

পরিচয় থেকে বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তারা। সেই পরিকল্পনা থেকে ‘জাস্ট গো’ নামে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক পেইজ খুলে ডকুমেন্টারি নির্মাণ শুরু করেন।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ফাইল ছবি

শুটিং ও এডিটিংয়ে সহায়তার জন্য সহপাঠী সিফাত ও রিফাতকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণে উৎসাহী সিনহাসহ চারজনের দল হয়ে ২০২০ সালের জুলাইয়ের শুরুতে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন শিপ্রারা।

সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরপর ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে ওই সময় ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে ‘হেনস্থার’ শিকার হওয়ার কথা শিপ্রা তুলে ধরেছিলেন।

সে সেময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি জাস্টিস চাই। সিনহাকে কেন মারা হল, আমাদের কেন ধরা হল, আমরা কেন অনিশ্চিত একটা সময় কাটাচ্ছি, যে স্বপ্নের জন্য আমরা এত কিছু হারালাম, এত ঝড়-ঝাপটা পেরুলাম, সেই স্বপ্নটাও আসলে সাম হাউ কেউ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই স্বপ্নটুকু বাঁচাতে চাই, জাস্টিস চাই।”

আরও পড়ুন