এই ঘটনায় তিনি নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত জানিয়ে শিপ্রা বলেছেন, “আমি কীভাবে আছি আপনারা হয়ত বুঝতে পারছেন, আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।”
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের ছাত্রী শিপ্রা দেবনাথের সঙ্গে সিনহার পরিচয় দেড় বছর আগে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে গিয়ে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
সেই পরিকল্পনা থেকে ‘জাস্ট গো’ নামে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক পেইজ খুলে ডকুমেন্টারি নির্মাণ শুরু করেন। শুটিং ও এডিটিংয়ে সহায়তার জন্য সহপাঠী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূরকে সঙ্গে নিয়ে চারজনের দল হয়ে জুলাইয়ের শুরুর দিকে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন শিপ্রারা।
সেখানে কাজ চলার মধ্যে গত ৩১ জুলাই টেকনাফের একটি তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে সিনহা রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর শিপ্রা ও সিফাতকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে এই মামলায় টেকনাফ থানার ওসিসহ পুলিশের সাত সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে ছাড়া পান তারা।
এরপর সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে তাদের তৈরি করা একটি ডকুমেন্টারি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিও তাদের প্রকাশিত না হওয়ায় নিজেদের ‘স্বপ্নকে’ টিকিয়ে রাখতে ‘জাস্ট গো’-তে ডকুমেন্টারি প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন শিপ্রা। এরপরই শুরু হয় তাকে নিয়ে নানা ধরনের ‘নোংরা’ প্রচারণা।
বোন (শিপ্রা) আপাতত র্যাবের নিরাপত্তায় থাকলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের জন্য অদৃশ্য সামাজিক বাধা সৃষ্টি হয়েছে, নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে গেছে।
“আমার বোন একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী, তার পার্সোনাল জীবন নিয়ে এভাবে হেনস্তা করা কি ঠিক হয়েছে বা হচ্ছে? যারা করছেন এটা অবশ্যই নোংরা কাজ করছেন। মানুষকে শ্রদ্ধা করা উচিত, বিশেষ করে নারীকে।”
শুভজিৎ বলেন, “ছবিগুলো তো আমার বোন তার ফেইসবুকে দেয়নি। তাহলে ব্যক্তিগত ছবিগুলো এনে এখানে তার চরিত্রহনন করা হচ্ছে কেন, কী তাদের উদ্দেশ্য? ওটা তো তার নিতান্তই ব্যক্তিগত ছবি ছিল।”
এসব ছবি যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভাই, বর্তমান যে অবস্থায় আছে আমার বোন সে অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটুক। তারপর সবাই মিলে পারিবারিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নেব আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”
এভাবে কারও ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না ছড়াতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
শুভজিৎ বলেন, “শিপ্রা এর মধ্যে জাস্ট গো-তে একটি ভিডিও আপলোড করেছিল। কারণ সে মনে করেছিল, জাস্ট গো নামে আরও অনেক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রচুর সাবস্ক্রাইব করছিল এবং তখন শিপ্রা মনে করে ছিল, এভাবে তো তাদের আসল ‘জাস্ট গো’র মৌলিকত্ব হারিয়ে যাবে। তাই ভিডিওটি আপলোড করেছিল।
“কিন্তু সেই ভিডিও মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। তাই বোন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিডিওটি সরিয়ে দিয়েছিল।”
এখন কেমন আছেন জানতে চাইলে শিপ্রা শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি মানসিকভাবে কীভাবে রয়েছি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি সকল কথা, সকল বিষয় এবং সব কিছু নিয়ে খুব শিগগিরই কথা বলব।
“তবে এই মুহূর্তে আমি আর কোনো কথা বলতে পারছি না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনহা হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিপ্রার কিছু ব্যক্তিগত ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। এসব ছবি তদন্ত কর্মকর্তার নজরে এসেছে।
“তদন্ত কর্মকর্তা হত্যা মামলা সংক্রান্ত যা কিছু পাচ্ছেন তথ্য-উপাত্ত সব সংগ্রহ করে উনার তদন্ত পরিচালনা করছেন।”