বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা এবং নাগরিক সংগঠন সুজন-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে এক হাত নিয়েছেন বর্তমান সিইসি কে এম নূরুল হুদা।
Published : 27 Jan 2022, 12:59 PM
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে দুজনের সমালোচনার জবাব দেন সিইসি।
মধ্য ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি এটিএম শামসুল হুদা বর্তমান ইসির সমালোচনা করে বলেন, সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন করতে পারত। তাদের ‘পারফর্মেন্স সন্তোষজনক নয়’। তারা বিভিন্ন বিষয়ে ‘বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন’।
ওই প্রসঙ্গ টেনে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “কয়েকদিন আগে এটিএম শামসুল হুদা সাহেব সবক দিলেন। তিনি বললেন, আমাদের অনেক কাজ করার কথা ছিল, করতে পারিনি, বিতর্ক সৃষ্টি করেছি। একজন সিইসি হিসেবে তার কথা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
“ইসি ইজ ওয়ান অব দ্য মোস্ট কমপ্লেক্স ইন্সটিটিউশন। এর মধ্যে একজন বাহবা নিয়ে যাবেন বা স্বীকৃতি নিয়ে যেতে পারে- এটা সম্ভব না। তার পক্ষে সম্ভব; আমিত্ব বোধ থেকে বলতে পারেন।”
২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সিইসির দায়িত্ব পালন করা এটিএম শামসুল হুদা ‘বিরাজনীতির পরিবেশে সাংবিধানিক ব্যত্যয়’ ঘটিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন কে এম নূরুল হুদা।
তিনি বলেন, “ইসির দায়িত্ব ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা। তিনি নির্বাচন করেছেন ৬৯০ দিন পরে। এ সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তখন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না, সেনা সমর্থিত সরকার ছিল; ইমারজেন্সির কারণে এটা করেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে করা সম্ভব না।”
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিককে (সুজন) প্রার্থীদের হলফনামা প্রচরের কাজ দেওয়ার সমালোচনা করে কে এম নূরুল হুদা বলেন, “বিরাজনীতির পরিবেশের মধ্যে তিনি (এটিএম শামসুল হুদা) এটা করেছেন। তিনি বদিউল আলম মজুমদারের কীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন? লাখ লাখ টাকা কীভাবে দিলেন? এ রকম অনেক কিছু করা যায়। ভেবেচিন্তে কাজ করতে হবে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে এখান থেকে গেছে, এটা সম্ভব না, ক্যানট বি। অনেক সমালোচনার আছে।”
বর্তমান ইসি সব কিছু স্বচ্ছভাবে মোকাবেলা করতে পারে বলেও দাবি করেন সিইসি।
বদিউল আলম ‘সংবাদ সম্মেলনের বিশেষজ্ঞ’
বদিউল আলম মজুমদার বর্তমান কমিশনকে ‘অদক্ষ’ আখ্যা দিয়ে ভোটে ‘অনিয়ম’ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ‘ভেঙে দেওয়া’সহ বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছেন।
এ প্রসঙ্গ টেনে কে এম নূরুল হুদা বলেন, পূর্ব পরিচিত হলেও সুজনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ওই সংগঠনকে কোনো কাজে সম্পৃক্ত করেনি বর্তমান ইসি।
তিনি বলেন, “বদিউল আলম মজুমদার এই কমিশন নিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেন। এটার একটা ইতিহাস আছে। এখানে যোগদানের পর থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে চান।… তাকে নিয়ে অনেক ঝামেলা, অনিয়ম। এক কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম, কাজ না করে টাকা দেওয়া, নির্বাচন কমিশনে সভায় অনিয়ম নিয়ে সিদ্ধান্ত আছে।”
বর্তমান ইসির সময়ে কাজ না পাওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ হয়ে’ বদিউল এখন কমিশনের সমালোচনা করছেন বলে মন্তব্য করেন নূরুল হুদা।
তিনি বলেন, “দুই বছর আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছেন। একা একা এসেছেন। খবর পেয়েছি প্রায় ১ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ও অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে। … এ লোকের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা যায় না, বিশ্বাস করা যায় না। উনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো বিশেষজ্ঞ..., কাজ নেই। সংবাদ সম্মেলন করার বিশেষজ্ঞ উনি। আমাদের তো তার দরকার নেই।”
সিইসি বলেন, “জবাবদিহি অবস্থানের মধ্যে আছি। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি আপনি নন। আপনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নন। কাগজ দিয়ে বই তৈরি করবেন এ জন্যে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এ কাজ করার কী দরকার। এসব ওয়েবসাইটে আছে। এ ঝালমুড়ি ঠোঙ্গা বানানো ছাড়া কোনো কাজ নাই”।
বদিউল আলমকে উদ্দেশ্য করে নূরুল হুদা বলেন, “তখন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ইমারজেন্সি সরকার, সেনাশাসিত একটা অবস্থা। ওই অবস্থা আর এখনকার অবস্থা এক না। কাউকে কাজ দিলে আমাকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে, যোগ্যতা আছে কিনা, যে কাজের জন্য বলছেন এ জন্যে আপনার প্রয়োজন নেই। তখন ছিল যে অবস্থা সেই কমিশন কীভাবে করছেন, এখানে পারবেন না।”
নির্বাচন কমিশনের মত ‘জটিল’ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কারো ‘বাহবা পাওয়ার সুযোগ নেই’ বলে মনে করেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। ২০১৭-২০২২ সময়ে ইসির দায়িত্ব পালনে কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্যের বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিদায় নেবে।