যেসব অভিযোগে বরখাস্ত হলেন মেয়র জাহাঙ্গীর

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশে দুর্নীতি আর অনিয়মের অনেক অভিযোগ এনেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2021, 05:03 PM
Updated : 25 Nov 2021, 05:03 PM

জাহাঙ্গীরের মেয়র পদের ভবিষ্যত নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে বরখাস্তের কথা জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন-২ শাখা তাকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

উপ সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতি বছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ’ নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলছে, ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণব্যাতিত রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মতামত চাওয়া হলেও সে বিষয়ে কোনো জবাব দেননি মেয়র।

“এসব অভিযোগ ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধি নিষেধ পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের শামিল, যা ২০০৯ সালের সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ১৩ (১) (ঘ) অনুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ।”

সিটি করপোরেশন আইনের ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, মেয়র অথবা কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন, যদি তিনি-

 (ক) যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন; অথবা

 (খ) নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন;

 (গ) দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করেন অথবা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন;

 (ঘ) অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন;

 (ঙ) নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন মর্মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন মাসের মধ্যে প্রমাণিত হয়;

 (চ) বার্ষিক ১২টি মাসিক সভার পরিবর্তে ন্যূনতম ৯টি সভা গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া অনুষ্ঠান করতে, বা ক্ষেত্রমত, সভায় উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হন।

এখানে ‘অসদাচরণ’ বলতে ক্ষমতার অপব্যবহার, এ আইন অনুযায়ী বিধি-নিষেধ পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন, নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করা বা অসত্য দেওয়াকে বোঝাবে।

অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে বিধি অনুযায়ী তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশন আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী অপসারণের কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে।

“সেহেতু সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ১২(১) অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল।”

আইনের ধারা ১২ (২) অনুযায়ী এ আদেশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে জাহাঙ্গীরকে।

তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তিন সদস্যের মেয়র প্যানেল গঠন করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারা হলেন- ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ, মো. আব্দুল আলীম মোল্লা এবং মহিলা কাউন্সিলর মোসা. আয়েশা আক্তার।

নিয়ম হল, মেয়রের অবর্তমানে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ওই প্যানেলের প্রথমজন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় জন, পর্যায়ক্রমে তৃতীয়জন দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ, জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে এখন দায়িত্ব বুঝে নেবেন আসাদুর রহমান কিরণ।

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরশেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। তিনি ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে জাহাঙ্গীরের একটি মন্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনার সৃষ্টি হয়। গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি।