ইউরোপীয় অনুকরণে সরকার বাংলাদেশের উন্নয়ন ‘চায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
Published : 25 Nov 2021, 07:25 PM
তিনি বলেছেন, “আমরা কেবল উন্নত রাষ্ট্র নয়, ২০৪১ সালের মধ্যে এমন একটি রাষ্ট্র রচনা করতে চাই, যে রাষ্ট্র হবে মানবিকতা ও সামাজিক উন্নয়নের উদাহরণ। যে রাষ্ট্রে বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিকতার উন্নয়ন হবে।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা ইউরোপের অন্ধ অনুকরণে এমন বস্তুগত উন্নয়ন চাই না, যেখানে এক দুর্ঘটনা ঘটলে শত শত গাড়ি পাশ দিয়ে চলে যায়, কেউ খবর রাখে না। ইউরোপের মত তেমন উন্নয়ন চাই না, যেখানে বাবা মা বৃদ্ধ হলে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে হবে আবার ৫০ শতাংশ বিয়ে ভেঙ্গে যাবে- সেই উন্নয়ন চাই না।“
সরকার তাহলে কী চায়, সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমরা মেধা, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ সমৃদ্ধ নতুন একটি প্রজন্ম সৃষ্টি করতে চাই যারা ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে এমন একটা রাষ্ট্রে রূপান্তর করবে, যে রাষ্ট্র পৃথিবীর সামনে উন্নয়ন ও মানবিকতায় উদাহরণ সৃষ্টি করবে। পৃথিবীকে পথ দেখাবে। তখন মেঘের ওপার থেকে, আকাশের ওপর থেকে বঙ্গবন্ধু দেখবেন বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তর হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘অদম্য গতিতে’ এগিয়ে চলছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
“প্রধানমন্ত্রী সংকটে, সংগ্রামে দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিতে হয়, সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সমস্ত প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই বিষয়টি এখন অকপটে স্বীকার করছে।
“পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছিলেন। তিনি জানতেন কখন কোন বিষয়টি জনগণের সামনে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশ রচনাই করেননি- বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরের জন্য কাজ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাকে হত্যা করা হয়েছিল।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল নয় দশমিক ৫৯ শতাংশ। এরপর আর ওই হারে প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ অর্জন করতে পারেনি।
“বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে আর সেইভাবে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে স্বাধীনতার ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হত উন্নত রাষ্ট্র।”
তিনি বলেন, মাথাপিছু আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, মানব উন্নয়নসহসহ ‘সব সূচকে’ বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
“এটাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ রচনার স্বার্থকতা। আজকে পাকিস্তান আমাদের দিকে তাকিয়ে হা-হুতাশ করে। পাকিস্তানের আলোচনার ঝড় ওঠে। তাদের প্রধানমন্ত্রী অকপটে স্বীকার করে, সব সূচকে বাংলাদেশ তাদের পেছনে ফেলে গেছে।”
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, গণতন্ত্রকে মূলমন্ত্র ধরে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে। সেই দেশে গত এক যুগে চালু হয়েছে ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র, সীমিত গণতন্ত্র’।
রুমিন বলেন, “বেশি উন্নয়ন, কম গণতন্ত্র। উন্নয়নের গণতন্ত্র নামক উদ্ভূত সব স্লোগান। ঠিক যেমন আইয়ুবের বুনিয়াদী গণতন্ত্র। সামরিক স্বৈরশাসক তার ক্ষমতায় থাকার বয়ান হিসাবে উন্নয়নকে বেছে নিয়েছিল। বর্তমান সরকারও একদম তাই।”
বিএনপির এই সাংসদ বলেন, “যে কোনো প্রসঙ্গে সত্তরের নির্বাচনের কথা এলে আজকেও ভাবতে অবাক লাগে ইয়াহহিয়ার মত একজন সামরিক শাসকের অধীনেও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল। যেখানে বঞ্চিত, শোষিত পূর্ব পাকিস্তানের কোনো দল ১৬৭টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।
“সুষ্ঠু নির্বাচন, ভোটাধিকার প্রয়োগ, নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন বিনা প্রতিবাদে সেই রায়কে মেনে নেওয়া এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যেটা না হলে একটা দেশ ভেঙে নতুন আরেকটা দেশের জন্ম হতে পারে।”
বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ‘অকল্পনীয় পর্যায়ে’ পৌঁছে গেছে বলে মন্তব্য করেন রুমিন।
তিনি বলেন, “আমি দেখি উন্নয়নের বিষে লাল বাংলাদেশ। মার্কিন সংস্থা মিলোনিয়ান চ্যালেঞ্জ করপোরেশন সুশাসন নিশ্চিত করতে চাওয়া দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন অংকে অনুদান দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ এই ফান্ড পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের ১৬টি ক্ষেত্রে রেড জোনে আছে বাংলাদেশ। আগের বছরগুলোতে ছিল আরও কম। এখন পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে।”
জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “কিছু মানুষের কুকীর্তির জন্য পুরো জাতি দায় নিতে পারে না। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র্রে কোথাও কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। আপনারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে কথা বলেন। ইস্যু করেন। যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।”
দেশের অনেক অর্জন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেই অর্জনকে ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশ এগিয়ে গেছে। ৫০ বছর হয়ে গেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনেকে শক্তিশারী করতে হবে। না হলে অর্জন ভবিষ্যতে ধরে রাখা যাবে না।
“গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র নির্বাচন। সেই নির্বচানকে নিরপেক্ষ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে।”
অন্যদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান, মৃণাল কান্তি দাস, শবনম জাহান, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নাহিদ ইজহার খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, প্রাণ গোপাল দত্ত, তানভীর শাকিল জয়, জাসদের শিরীন আখতার, জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, গণফোরামের মোকাব্বির খান, জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান, বিকল্পধারার আব্দুল মান্নান দিনের প্রথমভাগের আলোচনায় অংশ নেন।
বুধবার জাতীয় সংসদে এ সাধারণ আলোচনার জন্য প্রস্তাব তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দুইদিন আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার গ্রহণ করা হবে।