সংসদ সদস্য শাহাজান খান এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তাকে শ্রমিক অসন্তোষের ‘ষড়যন্ত্রের মিথ্যা’ অভিযোগে জড়ানোর দায়ে অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।
Published : 05 Oct 2021, 09:14 PM
মঙ্গলবার সংসদ ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি উপ কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার পর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এ সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে এদিন কমিটির বৈঠকে শাজাহান খান উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সাব কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই জন অফিসারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন।
“আমরা ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রত্যাহার করতে বলেছি। আর মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার কারণে মো. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
উপমহাপরিদর্শক ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিস্তারিত কিছু জানি না। সুতরাং এ বিষয়ে কথা বলব না।”
এর আগে অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক শেখ আসাদুজ্জামান ও জাকির হোসেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের সংসদ হোস্টেলের কার্যালয়ে গিয়ে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ তৈরির জন্য কাজ করছেন বলে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন উপমহাপরিদর্শক ইউসুফ।
ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
সংসদীয় কমিটির নথি থেকে জানা গেছে, গাজিপুরের ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের মালিক ‘বেআইনিভাবে’ কারখানা বন্ধ রাখায় এবং বকেয়া পরিশোধ না করায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এ অবস্থার নিরসনে ২০১৯ সালের ২৭ মে সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে মালিক-শ্রমিক নেতা এবং কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকতাদের সঙ্গে শাজাহান খানের বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে শ্রম পরিদর্শক উজ্জল দেব ও জালাল খান উপস্থিত ছিলেন।
ওইদিন একই সময়ে শাজাহান খানের অফিসে আসাদুজ্জামান ও জাকির হোসেন ‘অনুমতি ব্যতিরেকে’ উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করে কোনো সভায় যোগদান করার জন্য তাদের কর্মকাণ্ড ‘অসদাচরণ প্রতীয়মান হওয়ায়’ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয় বলে সংসদীয় কমিটির নথিতে উল্লেখ করা রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাজাহান খান তাকে জড়িয়ে সরকারি দপ্তরের প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি কমিটির বৈঠকে তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করে এর সমাধান চান।
পরে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি পুন:তদন্তের জন্য শামসুন নাহারকে আহবায়ক করে দুই সদস্যের উপ কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে ওই উপ কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা শেখ আসাদুজ্জামান ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ঘটনার সত্যতা মেলেনি।
ঘটনার দিনে তারা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য শাজাহান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন।
ওই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলীও সংসদীয় উপ কমিটির কাছে তা স্বীকার করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণাদি দাখিল করতে পারেনি বলে উপ কমিটির পুন:তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। ঘটনার জন্য ইউসুফ আলী কমিটির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কর্মকর্তার তদন্ত রিপোর্টকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল হক ‘দু:খজনক’ বলে উপ কমিটির কাছে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবারের বৈঠকে উপ কমিটির এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দুই কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে কমিটির সদস্য মোঃ শাজাহান খানের নামে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে এছাড়া বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জনবল বৃদ্ধি এবং শূন্যপদে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
একইসঙ্গে গাজীপুরে সরকারের খাস জমিতে শ্রমিকদের আবাসন তৈরিতে উপযুক্ত খাসজমি না পাওয়া গেলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের জমি কিনে আবাসন তৈরির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশও এসেছে বৈঠক থেকে।
বৈঠকে কমিটির সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শাজাহান খান, মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মানু মজুমদার, শামসুন নাহার এবং মোঃ আনোয়ার হোসেন (হেলাল) অংশগ্রহণ করেন।