করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদরাসাগুলোতেও রোববার ক্লাস শুরু হয়েছে।
Published : 12 Sep 2021, 04:22 PM
রাজধানীর পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি মাদরাসা সরেজমিনে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ছাত্রদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি, কোথাও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। কোথাও দুটো একসঙ্গে নেই।
তবে দীর্ঘদিন পর মাদরাসা চালু হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক- সবাই খুশি। এদের একজন লালবাগ জামিয়া কোরানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার ‘দাওরায়ে হাদিস’ বিভাগের ছাত্র আরমান হোসাইন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, অন্যরা অনলাইনে ক্লাস পেলেও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পায়নি। তাই ক্লাসের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের ভাবতে হবে।
“এক বছরে বড় বড় ছয়টি কিতাব পড়ে শেষ করতে হয়। তবে ক্লাস শুরু হয়েছে এতেই ছাত্ররা অনেক খুশি।”
আরমানের মত একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন একই মাদরাসা মেশকাত শরীফ বিভাগের শিক্ষার্থী আবরারুল হক।
মোনতাসিরুল ইসলাম ইসলামবাগ মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের শিক্ষার্থী। তার ভাই নেয়ামুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনেক দিন পর মাদ্রাসা চালু হওয়ায় তিনি খুশি।
সরজমিনে বিভিন্ন মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেছে, রোববার পুরোদমে পাঠদান চলছে। তবে সব ছাত্রদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্লাস দুই সপ্তাহ আগেই শুরু হয়েছে। তবে রোববার সবাইকে নিয়ে ক্লাস শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মহিবুল্লাহ বলেন, তার মাদরাসায় ১২০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের সবাই আবাসিক।
“১২ সেপ্টেম্বর থেকে দূর দূরান্ত থেকে কিছু শিক্ষার্থী চলে এসেছে। ওইসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু ক্লাস হয়েছে।”
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে ঢিলেঢালা ভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় ছাত্রদের কাছাকাছি বসতে হয়েছে। তবে তারা প্রায় সবাই মাস্ক পরেছে।
ইসলামবাগ মাদরাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০০ জন। এদের মধ্যে নুরানী, নাজেরা ও হেফজ বিভাগের ৪০০ আর বাকি ২০০ কিতাব ও ফতোয়া বিভাগের।
ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
লালবাগ বড় কাটারা জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসায় ৭০০ ছাত্র। রোববার প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণিতে উপস্থিত ছিল বলে জানান মাদ্রাসার মোহতামিম (অধ্যক্ষ) আবুল হাসানাত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাস চালানোর চেষ্টা করছি। করোনাকালে পড়াশোনার যে ক্ষতি হয়েছে। তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
করোনাভাইরাসের মহামারীতে ৫৪৩ দিন কার্যত ঘরে বন্দি থেকে রোববার সকাল থেকে স্কুলে-কলেজে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।
মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা স্কুল-কলেজের মত দীর্ঘ সময় বন্ধ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গড়ে ছয় মাসের মত মাদরাসার পড়াশোনা বন্ধ ছিল।
“শাওয়াল মাস থেকে মাদরাসার ক্লাস শুরু হয়, গেছে মাত্র তিন মাস, বাকি নয় মাস। সুতরাং পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।”