গ্রেপ্তারের পর চিত্রনায়িকা পরীমনিকে লাগাতার তিন দফায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারির আবেদনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে হাই কোর্ট।
Published : 29 Aug 2021, 04:24 PM
পরীমনিকে লাগাতারভাবে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে স্বপ্রণোদিত রুল চেয়ে রোববার হাই কোর্টে আবেদনটি করা হয় মানবাধিকার ও আইনি সহায়তাকারী সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষ থেকে।
পরে তা বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান আদালতে বলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না গত বৃহস্পতিবার স্বপ্রণোদিত আদেশের জন্য বিষয়টি (পরীমনিকে রিমান্ড নেওয়া) উল্লেখ করেছিলেন। আবেদনটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “রুল রিটার্ন (শুনানির জন্য) হয়ে আসুক, পরে দেখব।”
গত ২২ অগাস্ট পরীমনির পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখ রাখেন।
পরদিন আরেক আবেদনে ‘দ্রুত শুনানির’ আর্জি জানান পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান। সে আবেদনটি আমলে নেয়নি ওই আদালত।
পরে মহানগর দায়রা জজ আদালতের ২২ অগাস্টের আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে গত বুধবার হাই কোর্টে আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান। সাথে পরীমনির জন্য জামিনও চাওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার সে আবেদনের শুনানিতে পরীমনির জামিন আবেদনে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশে উষ্মা প্রকাশ করে হাই কোর্ট।
সেদিন শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, পরীমনিকে গ্রেপ্তার করার ২৬ ঘণ্টা পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর রিমান্ডের ক্ষেত্রে হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের কিছু নির্দেশনা আছে। যার একটাও নিম্ন আদালত অনুসরণ করেনি। নিম্ন আদালতই যদি অনুসরণ না করে তবে কে অনুসরণ করবে?
এ বক্তব্যের পর জেড আই খান পান্না পরীমনির রিমান্ড নিয়ে অদেশ চাইলে আদালত আবেদন নিয়ে আসতে বলে। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার আইন-সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে অবেদনটি করা হয়।
পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ-র্যাবের লাগাতারভাবে তিন দফায় ১৯ দিনের রিমান্ড আবেদন এবং তাদের আবেদনে সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর কেন স্বেচ্ছাচারী, বেআইনি ও আইনত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে স্বপ্রণোদিত রুল জারির আরজি জানানো হয় আবেদনে।
গত ৪ অগাস্ট পরীমনিকে তার বাড়ি থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়।
পরদিন ৫ অগাস্ট পরীমনিকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশের অপরধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। অন্যদিকে পরীমনির জন্য তার আইনজীবী জামিন আবেদন করে।
আদালত সিআইডির আবেদনে সাড়া দিয়ে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
চারদিনের রিমান্ড শেষে গত ১০ অগাস্ট পরীমনিকে আদালতে হাজির করে ফের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি। সেদিনও পরীমনির আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেন।
সেদিনও পরীমনির জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে দেয়। এরপর ১৯ অগাস্ট আবার পরীমনিকে কোর্টে তুলে ৫ দিনের রিমান্ড চায়। সেদিন আদলত পরীমনির এক দিনের রিমান্ডে দেয় আদালত।
সবমিলিয়ে লাগাতারভাবে তিন দফা আবেদনে পরীমনিকে সাতদিন রিমান্ডে দিয়েছে আদালত; যা বর্বর, নিষ্ঠুর, আমানবিকতা এবং সর্বোপরি মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে।