প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা এবং আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি একই হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
Published : 22 Aug 2021, 07:20 PM
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে শিক্ষা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্প নিয়ে আলোচনাকালে কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দুটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছি। বাস্তবায়নে খুবই ধীরগতি।
“আমাদের মনে হচ্ছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয় নেই। তাছাড়া বেশ কিছু প্রকল্পে দেখা গেছে আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি হুবহু একই। এটা হওয়ার কথা নয়। আমাদের মনে হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের ঘাটতি রয়েছে।”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এই প্রধান হুইপ বলেন, “তারা (মন্ত্রণালয়) কমিটিতে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে অনেক বিভ্রাট রয়েছে। তারা সঠিকভাবে তথ্য দিতে পারেনি।
“অবশ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, তিনি এই মন্ত্রণালয়ে নতুন এসেছেন। যার কারণে তিনি সার্বিক বিষয়ে আপডেট নন। তারা নতুন করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন।”
সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতার ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টির মেয়াদকাল শেষ হলেও অগ্রগতি কম। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছয়টির অগ্রগতি ২০ শতাংশের কম। একটির অগ্রগতি মাত্র নয় শতাংশ। সর্বোচ্চ অগ্রগতি হওয়া দুটি প্রকল্পের অগ্রগতি যথাক্রমে ৬৫ ও ৮০ শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি শুরু হওয়া দেড় বছরে এই বিভাগের একটি প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য শতাংশ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের চলমান ১৭টি প্রকল্পের মধ্যে আটটির অগ্রগতি ২৫ শতাংশের কম। তিনটির অগ্রগতি ৫০ শতাংশের কম। বাকি ছয়টির অগ্রগতি ৫০ শতাংশের বেশি।
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৩০টি প্রকল্পের মধ্যে ১৭টির অগ্রগতি ২৬ শতাংশের কম, দুটির অগ্রগতি ৫০ শতাংশের কম এবং বাকি নয়টির অগ্রগতি ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে।
যেসব প্রকল্পের অগ্রগতি বেশি, তার কয়েকটির মেয়াদ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। অন্যগুলোর মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর ও জুনে শেষ হবে।
এই মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণাগার স্থাপন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ১০ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের তিন বছরে অগ্রগতি মাত্র ১০ শতাংশ।
ইকোসিস্টেম বেসড অ্যাপ্রোচ টু অ্যাডাপশন (ইবিএস) ইন দ্যা ড্রাউট প্রোন বারিন্দ ট্র্যাক্ট অ্যান্ড হাওর ওয়েটল্যান্ড এরিয়া প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের দুই বছর সময় চলে গেছে।
সুনীল অর্থনীতি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য প্রতিবেশ সম্পদের সমীক্ষা প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। দুই বছর মেয়াদের প্রকল্পে আর সময় আছে চার মাস।
ইস্টাবলিশিং ন্যাশনাল ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন প্রোফাইল টুওয়ার্ডস মেইন স্ট্রিমিং এসএলএম প্রাবপ্রিস ইন সেক্টর পলিসিস প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত জুনেই এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি দুই দশমিক ২৭ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা।
বাংলাদেশ ফার্স্ট বাইনিয়াল আপডেট রিপোর্ট টু দ্যা ইউএসএফসিসিসি প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ছয় দশমিক ১৭ শতাংশ।
পরিবেশ নির্গমন পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা জোদারকরণ প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। রিনিউয়াল অব ইন্সস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং ফর দ্য ফেসআউট অব অডিএস প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ২১দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুরের অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আবাস্থল উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৭১ শতাংশ।
শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকো-পার্ক, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রামের আর্থিক অগ্রগতি ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, বাস্তব অগ্রগতি ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। চার বছর মেয়াদী এই কর্মসূচি গত জুনে শেষ হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি ৭২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরে এর মেয়াদ শেষ হবে।
স্থানীয় নৃগোষ্ঠী জনগণের সহায়তায় মধুপুর জাতীয় উদ্যানের ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, কক্সবাজারে অধিকতর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি ২২ দশমিক ৪২ শতাংশ।
কক্সবাজার জেলায় সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো-টুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বাস্তব অগ্রগতি ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বিভাগে পুন:বনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ১১ দশমিক ০৭ শতাংশ।
মাদারীপুর জেলার আওতায় চরমুগুরিয়া ইকো-পার্কের আধুনিকায়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।
চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।
কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, “প্রকল্প নিয়ে কথা বলার সময় মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কথা তুলেছে। আমরা বলেছি, ওয়ার্ক অর্ডার হয়ত এখন দিচ্ছেন না। কিন্তু তার আগের কাজগুলো তো ঠিকমতো করা যায়। প্রকল্পের সমীক্ষা, সক্ষমতা যাচাই, প্রাক্কলন এসব বিষয় যদি ঠিকমতো হয় তবে বাস্তবায়ন সহজ হয়।”
সংসদীয় কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন চলমান প্রকল্পগুলেঅর আর্থিক বিবৃতিসহ প্রতিবেদন আগামী দুই মাসের মধ্যে কমিটির কাছে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জমি অধিগ্রহণে সুবিধাজনক জায়গা নির্ধারণ করতে যে কেনো প্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে জায়গা একবারে নির্দিষ্ট (যেমন সদর) না করে প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা থাকা সাপেক্ষে এবং সময় বৃদ্ধি রোধে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে কাজের সুবিধার্থে ও আর্থিক খরচ কমাতে বড় প্রকল্পগুলো মন্ত্রণালয়কে একাধিক ভাগে ভাগ করে গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ বি তাজুল ইসলাম, ফজলে হোসেন বাদশা, বজলুল হক হারুন, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ও খাদিজাতুল আনোয়ার অংশ নেন।