হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ড: শনাক্ত ২৪ জনের লাশ বুঝে পেল পরিবার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় এক মাস আগে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিবারের কাছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2021, 08:31 AM
Updated : 4 August 2021, 09:02 AM

বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে উপস্থিত স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রোমানা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাসেম ফুডস কারখানা থেকে পোড়া যে ৪৮টি মৃতদেহ আনা হয়েছিল, ডিএনএ পরীক্ষায় তার মধ্যে ৪৫ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বাকি তিনটি লাশের ডিএনএ পরীক্ষার কাজ চলছে।

ফাইল ছবি

শনাক্ত ৪৫টি মৃতদেহের মধ্যে ২৪ জনের লাশ বুধবার পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সিআইডি অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, “বাকি মৃতদেহ শনিবার হস্তান্তর করা হবে।”

গত ৮ জুলাই হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনায় অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে তিনজনের লাশ তখনই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বাকি লাশগুলো এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে চোখে দেখে সেগুলো শনাক্ত করার উপায় ছিল না। ফলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের জন্য লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ৪৮টি মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য ৬৮ জন স্বজনের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি।

এদিকে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে খবর পেয়ে দুপুরের আগেই প্রিয়জনের মরদেহ বুঝে নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে হাজির হয়েছিলেন নিহত ২৪ জনের স্বজনরা।

বেলা দেড়টার দিকে নোয়াখালীর এনায়েত হোসেনের ছেলে মো. আয়াত হোসেনের (১৯) মৃতদেহ বুঝে নেন তার বাবা এনায়েত হোসেন। এরপর বাকি ২৩ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এই ২৩ জনের মধ্যে আছে কিশোরগঞ্জের তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম ইসলাম (১৬), গাইবান্ধার হাসানুজ্জামানের মেয়ে নুসরাত জাহান টুকটুকি, নেত্রকোণার কবির মিয়ার মেয়ে হিমা আক্তার, পাবনার শাহাদত খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী, নেত্রকোণার আজমত আলীর মেয়ে তাকিয়া আক্তারের লাশ।

এছাড়া কিশোরগঞ্জের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সাহানা আক্তার (১৮), একই জেলার খোকনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৩৮) ও ঝর্না আক্তারের মেয়ে ফারজানা (১৪), একই জেলার সুজনের মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১৫), গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মুন্না (১৬), স্বপন মিয়ার মেয়ে সাগরিকা সায়লা, একই জেলার আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা আক্তার (১৬), নারায়ণগঞ্জের বেলাল হোসেনের মেয়ে মিতু আক্তার, একই জেলার সুমাইয়া আক্তারের মা ফিরোজার (৩৬) মৃতদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্বজনদের কাছে। 

বগুড়ার নয়ন মিয়ার মেয়ে নাজমা খাতুন, হবিগঞ্জের আব্দুল মান্নানের মেয়ে ইসরাত জাহান তুলী, ডেমরার নাজমুল হোসেনের মা নাজমা বেগম (৩৫), নোয়াখালীর আবুল কাসেমের ছেলে রাশেদ (২৫), একই জেলার বাশারের ছেলে তারেক জিয়া (১৫), ভোলার কবির হোসেনের ছেলে রাকিব হোসেন (২১), গাজীপুরের লিলি বেগমের ছেলে রিপন মিয়া (১৮), কিশোরগঞ্জের মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী সাহানা আক্তার (৪৪) ও নরসিংদীর জসিম উদ্দিনের মেয়ে রিয়া আক্তারের (৩০) মরদেহও হস্তান্তর করা হবে বলে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় জ্বলছে আগুন, ১৬ ঘণ্টা পরও অনেক শ্রমিকের খোঁজ না মেলায় বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

হাসেম ফুডসের কিশোর কর্মী নাঈমের মৃতদেহ বুঝে নিতে কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছেন তার বাবা তাহের উদ্দিন।

তিনি জানালেন, মঙ্গলবার বিকালে সিআইডি ফোন পেয়ে তিনি ঢাকার পথে রওনা হন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসতে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

মৃতদেহ দাফনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে স্বজনদের ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন