হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ড: লাশ বুঝে পেতেও তিন সপ্তাহের অপেক্ষা

নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে অন্তত তিন সপ্তাহ লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2021, 04:44 PM
Updated : 9 July 2021, 08:08 PM

ডিএনএ পরীক্ষা করে মৃতদের শনাক্ত করার এই কাজটি করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। ইতোমধ্যে তারা কাজও শুরু করে দিয়েছে।

সিআইডির বিশেষ সুপার (ফরেনসিক) রোমানা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিটা মৃতদেহ থেকে দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করব। দাঁত ও হাড়ের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে অন্তত ২১ দিন সময় লাগবে।”

শনাক্ত হওয়ার পর পুলিশ মৃতদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করবে বলে জানান এই সিআইডি কর্মকর্তা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের ওই কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকালে ভয়াবহ আগুন লাগে। রাতেই ৩ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

ছয় তলা ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত তল্লাশি শেষে শুক্রবার দুপুরের পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মরদেহ বের করে আনতে শুরু করেন। সে সময় ৪৮টি বডি ব্যাগে মোট ৪৯টি মৃতদেহ পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন।

কিন্তু মৃতদেহগুলো পুড়ে এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে সেগুলো দেখে আর পরিচয় বোঝার সুযোগ ছিল না। ফলে একটি ব্যাগে পাঠানো দেহাবশেষগুলোকে একজনের ধরে নিয়ে ৪৮টি মৃতদেহের সুরতহাল তৈরি করা হয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জ জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, মর্গে ৪৭টি ব্যাগে ৪৭টি মৃতদেহ এবং একটি ব্যাগে দুটি খণ্ড আছে। সেই হিসেবে ৪৮টি মৃতদেহ ধরা হয়েছে।

“আমরা ৪৮টি ধরেই সুরতহাল করেছি, ডাক্তারি পরীক্ষায় ও ডিএনএ পরীক্ষায় যদি ওই দুই খণ্ড দুইজনের হয়, তাহলে সেভাবেই হিসাব করব।”

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর মনির বলেন, “উচ্চ মাত্রায় বার্ন হলে যে অবস্থা হয়, এই মৃতদেহগুলোরও এই অবস্থা। দুয়েকজন ছাড়া বাকিগুলো বোঝা যায় না, কুঁচকে গেছে। নারী না পুরুষ তাও বোঝা যায় না।”
মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত চলছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি শাহ জামান বলেন, “অনেক মৃতদেহের হাড়ও পুড়ে গেছে, ১১ জন এসআই মৃতদেহগুলোর সুরতহাল তৈরি করেছেন।”
মৃতদেহগুলো অনেক বেশি পুড়ে যাওয়ায় ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে মেলানো ছাড়া অন্য কোনোভাবে পরিচয় শনাক্তের উপায় নেই বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মাকসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত সোয়া ১১টার দিকে মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঁচটি মর্চুয়ারি রয়েছে। তারমধ্যে একটি নষ্ট। বাকি চারটি মর্চুয়ারিতে পুরনো মৃতদেহ রয়েছে। ওখানে চারটি মৃতদেহ রাখা যাবে।”
এবিষয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আপাতত সবগুলো মৃতদেহ মর্গে থাকবে। এই মৃতদেহ কী করা হবে, সেই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।”
সহকারী ডিএনএ সিস্টেম এনালিসিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন বলেন, যারা স্বজনদের নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছেন, পরিচয় শনাক্তের জন্য তাদের ডিএনএ নমুনাও নেওয়া হচ্ছে।
“এ পর্যন্ত ১৮ জন স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে আবারও নমুনা সংগ্রহ করা হবে।”
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে তিনি কাছের আত্মীয় বাবা, মা, ভাই বোনদের আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।