সাম্প্রতিক নাশকতার ঘটনায় ‘প্রকৃত কোনো আলেম বা বুজুর্গ’ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি মন্তব্য করে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, ফৌজদারী অপরাধে অপরাধী ‘আলেম নামধারী ক্ষমতালিপ্সু ও ষড়যন্ত্রকারীদেরই’ আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
Published : 15 Jun 2021, 02:10 PM
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে এর সমালোচনা করেন।
জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কোনো পর্যায়ে কোনো বুজুর্গ ব্যক্তি ও প্রকৃত আলেম গ্রেপ্তার বা মামলার আওতায় আসেননি। কেবলমাত্র আলেম নামধারী কিছু অর্থ ও ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন ফৌজদারী অপরাধে জড়িত; যারা ধর্মের নামে রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত, তারাই আইনের আওতায় এসেছে।
“যদি অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে, প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হোক। এবং ইতোমধ্যে বহু আলেমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা দোষী ব্যক্তি, তাদের বিরুদ্ধেই এ আইনগেত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
এর আগে বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিএনপির হারুনুর রশিদ বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশে আজকে আমরা কী দেখছি। ধর্মীয় স্কলার- যাদের আমরা আলেম বলি, তারা সাংঘাতিক নিপীড়নের মধ্যে রয়েছে। তারা রিমান্ড ও গ্রেপ্তারের সম্মুখীন। তাদের দয়া করে মুক্তি দিন।”
তিনি বলেন, “দেশের শীর্ষ ৫৬ জন আলেমের বিরেুদ্ধে দুদক নোটিস দিয়েছে। আমি মনে করি আলেমদের আগে আমাদের সাড়ে তিনশ এমপির বিরুদ্ধে দুদক নোটিশ দিলে তা সমাদৃত হত।”
নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় আট বছর আগে রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।
শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় সংগঠনটি। পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরাতে হয়।
ওই ঘটনায় কেবল ঢাকাতেই ৫৩টি মামলা হয়েছিল সে সময়। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানায় হয়েছিল আরও অন্তত ৩০টি মামলা।
বেশ কয়েক বছর নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা গত বছরের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় সরব হতে থাকে। এরপর গত মার্চ মাসের শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় কর্মসূচি নিয়ে নামে রাজপথে।
তাদের বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচি থেকে কয়েকদিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে সংঘাত-সহিংসতায় ডজন খানেক প্রাণহানি ঘটে। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন ভাংচুর ও আগুন ধরানো হয়।
এবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫১টি মামলা হয়েছে, তাতে ৩ হাজার ২৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সংসদে বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, “কোথায় মামলা করব? কার কাছে মামলা করব? কার কাছে অভিযোগ করব? কেউতো জিডি নিতে রাজি হচ্ছেন না- কথাটি বলছিলেন ত্ব-হার (আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান) স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন এবং তার সঙ্গে আরো তিন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোনো খোঁজ পাওয়া যাই নাই। একই সময় একই ধরনের অভিযোগ করতে দেখেছি চিত্র নায়িকা পরীমনিকে।
“তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি ভাগ্যবতী। কারণ তার মামলা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি তার (ত্ব-হা) পরিবারের। সেই সৌভাগ্য হয়নি বাংলাদেশের ৬০৪টি পরিবারের, যারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। তাদের ব্যাপারে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু বলছে, লোকাল পুলিশ স্টেশন কিছু বলতে পারছে না।”
হারুন ও রুমিনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, “হজ ও ওমরা থেকে আমরা পরীমনি আর গুমে চলে গেছি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে গুম খুন, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোতে বিশ্বাস করি না। ইসলামি স্কলারদের সম্মান করি। কিন্তু ওয়াজের নামে কিছু কিছু আলেম বিভ্রন্তি ছাড়াচ্ছেন। করোনা নিয়ে, ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হল। মুসলমানদের করোনা হলে নাকি ইসলাম মিথ্যা হয়ে যাবে। এই সমস্ত আলেমদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “সীমিত আকারে সবকিছু জায়েজ বলা যাবে না। সীমিত আকারে বিয়ে, সীমিত আকারে প্রেম, সীমিত আকারে ডেটিং- এগুলো করা যাবে না।”
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “বিভিন্ন ওয়াজ ফেইসবুকে শুনি, একটির সাথে আরেকটির কোনো মিল নেই। উনারা একজন আরেকজনকে বলেন প্রকৃত মুসলমান না। উনাদের বক্তব্য অনুযায়ী কেউই আসল মুসলমান নয়। এই সমস্ত বক্তব্য শুনলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়।”
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, “গুমের অভিযোগ খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে দেখা উচিত।”