সীমান্তে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 27 Mar 2021, 09:08 PM
শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সীমান্ত প্রসঙ্গ উঠে আসে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান।
সাক্ষাতের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা বাড়ার কথা তুলে ধরে বিষয়টিকে যথাযথভাবে ‘দেখার জন্য’ নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“প্রধানমন্ত্রী এই অনুরোধ জানিয়েছেন যেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো শূন্যে নেমে আসে। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, মাঠ পর্যায়ের সহযোগিতা এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে সহায়তা করবে।”
বৈঠকে দুই দেশের সরকার প্রধান বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো পর্যালোচনা করেন। পাশপাশি গত বছরে ডিসেম্বরে নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার মধ্যে যেই ভার্চুয়াল আলোচনা হয়েছিল সেগুলো এগিয়ে নিতে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান ইহসানুল করিম।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেলপথ বাণিজ্য, উচ্চ পর্যায়ের সফর ও আলোচনা, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, কলকাতা থেকে উত্তর পূর্ব ভারতে পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যবাহী ট্রেনের প্রথম যাত্রা ও কোভিড-১৯ বিষয়ক সহযোগিতা।
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এক মিলিয়নেরও বেশি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিককে তাদের দেশে প্রত্যাবাসনে ভারতের আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করে বাংলাদেশ। এদের অনেকেই যেন মাদক ব্যবসা ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য যত দ্রুত তাদের ফেরত পাঠানো যায় ততই মঙ্গল।
“ভারত রিফিউজিদের টেকসই প্রত্যাবর্তন চায় বলে বৈঠকে জানান নরেন্দ্র মোদী।”
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “তিস্তা পাড়ের মানুষের খুব কষ্ট হয়। ৯ বছর আমরা দুই দেশ এই চুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।”
“নরেন্দ্র মোদী বলেন, সবগুলো নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানের বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বাংলাদেশকে আরও ১২ লাখ কোভিড টিকা উপহার দেওয়ায় ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা ভারতের ‘সর্বাগ্রে প্রতিবেশী’ নীতিরই প্রতিফলন। ভারতের ঋণচুক্তি (এলওসি) বাংলাদেশ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে আগ্রহী।
তবে এর আওতায় অকার্যকর প্রকল্পগুলো তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দ্রুত ঋণ ছাড় করে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যেন বিলম্বিত না হয় প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন বলেও জানান ইহসানুল করিম।
শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারত বিশ্বে বৃহত্তম পাট উৎপাদন ও ব্যবহারকারী দুটি দেশ। তাই আমাদের অবশ্যই এই খাতটিকে আরো অর্থপূর্ণভাবে সহযোগিতা করতে হবে।”
“এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছেন, নির্বিচারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের মতো বিষয়গুলো আমাদের সহযোগিতায় অপ্রয়োজনীয় বিরোধ তৈরি করে। এটা দ্রুত সমাধানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।”
চট্টগ্রাম, মংলা বন্দর ব্যবহারের পাশপাশি ত্রিপুরাকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহার করতে দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য কিছু নতুন রুটের প্রস্তাব দিয়ে ভারতের প্রতি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় নরেন্দ্র মোদী ও ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর। এটা হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
যৌথ উদপানে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।
মুজিবনগর থেকে নদীয়ার সীমান্ত পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের নাম স্বাধীনতা সড়ক করার প্রস্তাবকে ভারত গ্রহণ করায় নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো সুন্দরভাবে আয়োজন করার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ স্থাপনের কথাও বৈঠকে জানান নরেন্দ্র মোদী।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যেই দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে তারও প্রশংসা করেন মৌদি।
দুই দেশই কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যুদ্ধ করছে জানিয়ে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশকে ১২ লাখ টিকা এবং ১০৯টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন।
দুই দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যা কিছু শ্রেষ্ঠ দুই দেশ সেগুলোর একটি প্রদর্শনীর আয়োজনের প্রস্তাব দেন নরেন্দ্র মোদী।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এবং জলপাইগুড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াবে জানিয়ে আগরতলা ও আখাউড়া ট্রেন লাইনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন মোদী।
নরেন্দ্র মোদী জ্বালানি ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন। জলবিদ্যুতের জন্য ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ভারতের সহযোগিতায় যেসব প্রকল্প হচ্ছে, সেগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার উপর গুরুত্ব দেন নরেন্দ্র মোদী ।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী মো.আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের পক্ষে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার অজিত কুমার দোভাল, পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী উপস্থিত ছিলেন।