অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের মামলার রায়ের কপি সরকারের কাছে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
Published : 19 Feb 2021, 05:03 PM
শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচলে ফেইসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উই- এর দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পাপুলের রায়টা আমরা পেয়েছি। আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় ৬১ পেইজের রায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় স্পিকারের কাছে এগুলো পৌঁছে দিয়েছি। এখন তারা বিধি মোতাবেক অ্যাকশন নেবেন।”
পাপুলের রায় ঠিক কত তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
রায় কবে হাতে পেয়েছেন জানতে চাইলে মোমেন বলেন, “আমরা ভারডিক্টটা হাতে পেলাম। আমাদের দেশের মতো কুয়েতেও ভারডিক্ট আসতে অনেক দেরি হয়। এজন্য আমরাও পেরেশানিতে ছিলাম। মিডিয়া প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, মাননীয় স্পিকারও প্রায়ই ফোন করেন এটা নিয়ে। এজন্য রায়টা যেন তাড়াতাড়ি পেতে পারি সেজন্য রাষ্ট্রদূতকে বলে রেখেছিলাম।”
উনি আমাদের কাছে কোনো আইনি সহায়তা চাননি। উনি ওখানে ব্যবসায়ী হিসাবে থাকেন। আমাদের কোনো লাল পাসপোর্ট নিয়ে যাননি। উনার নিজেরই প্রয়োজনীয় স্টাবলিশমেন্ট রয়েছে। উনি ওখানকার রেসিডেন্ট, ব্যবসায়ী উনি ছিলেন।”
অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য পাপুল। গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
পাপুলের বিষয়ে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
সম্প্রতি তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “সংবিধানে যা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে সংসদকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছালে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করবে।”
আনু্ষ্ঠানিকভাবে তথ্য পাওয়ার পর সংবিধান ও কার্যপ্রাণালী বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীও জানিয়েছিলেন।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য পড়ে তুলেছিলেন পাপুল। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেওয়ার কাজ করলেও কুয়েতে অন্যান্য ব্যবসার কাজও বাগিয়েছিলেন তিনি। কুয়েতে তার বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সেই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি।