কুয়েতে দণ্ডিত লক্ষ্মীপুরের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের আগাম জামিনের আবেদনে ব্যাংকের নথি জালিয়াতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 11 Feb 2021, 03:04 PM
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায়ে দুই মাসের মধ্যে দুদককে তদন্ত শেষ করতে বলেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে এদিন শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। জামিন আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “আগাম জামিন আবেদনে নথি জালিয়াতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুই মাসের মধ্যে দুদক সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলাম এবং তদবিরকারক হাফেজ আহমেদসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতিবেদন দেবে।”
দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে গত বছর ১১ নভেম্বর মামলা করে দুদক। ওই মামলায় গতবছর ২৬ নভেম্বর তারা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন।
ওই জামিন আবেদনের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান স্বাক্ষরিত একটি নথিও দাখিল করা হয়।
যেখানে লেখা ছিল, “এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখায় হিসাবে অর্থ পাচারের সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি।”
ওই জামিন আবেদনে বলা হয়, এই নথি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে তারা পেয়েছেন।
পরে ১০ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়।
এরপর ২২ ডিসেম্বর ওই নথিতে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞাকে তলব করে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করে হাই কোর্ট।
রুলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তার ‘স্ববিরোধী বক্তব্য’ কেন অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
ওই নথিতে বলা হয়েছে, “ঋণ হিসাব থেকে কোন কোন খাতে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, অথবা মানি লন্ডারিং হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করা যায়নি।” আবার গত বছর ৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে বলা হয়, “আলোচ্য ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং সংগঠিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি। অতএব, উক্ত অভিযোগটি এই বিভাগের তরফ থেকে নথিভুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।” এ বিষয়টিকেই আদালত ‘স্ববিরোধী’ বলছে।
তবে পাপুলের স্ত্রী-কন্যার আইনজীবী দাবি করেন, এ নথি এনআরবি ব্যাংক তাদের সরবরাহ করেছে। সে কারণে এনআরবি ব্যাংকের কাছেও এ বিষয়ে জানতে চায় আদালত।
এরপর গত ১২ জানুয়ারি এনআরবি ব্যাংক জানায়, তারা এ ধরনের নথি দেয়নি। আদালত তখন এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নথি তলব করে। আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক নথি দাখিল করে।
নথি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মোহাম্মদ শামীম আজিজ আদালতে বলেন, জামিন আবেদনে দেওয়া নথির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির মিল নেই। জামিন আবেদনে যা দাখিল করা হয়েছে, তা `জালিয়াতি’ হয়েছে। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তার তদন্ত হওয়া দরকার।
শুনানিতে জামিন আবেদনকারীর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজাও বলেন, ওই নথি যদি জাল হয়ে থাকে, তাহলে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত হওয়া দরকার।
শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ঠিক করে দেয়। রায়ে রুলটি যথাযথ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত বছর ৬ জুন কুয়েতে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল। অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে কুয়েতের আদালত।